কয়েক বছর আগেও যেখানে ভাটার পরিত্যক্ত চিমনি, পোড়া মাটি ও উচুঁ নিচু কৃষিজমি ছিল, সেখানে এখন রঙবেরঙের দেশি-বিদেশি ফুল। খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরের মহালছড়ির মুড়াপাড়ায় ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগে পাল্টে গেছে পুরো দৃশ্যপট। আইন বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে কৃষির প্রতি আগ্রহ থেকে এমন উদ্যোগ নেন মহালছড়ির স্বপ্নবাজ যুবক খালেদ মাসুদ সাগর। স্থানীয়ভাবে ২ একর জমি ইজারা নিয়ে ২০২৪ সালে শুরু করেন ফুলের চাষ। শুরুতে শতাধিক প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুল নিয়ে শুরু করলেও এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে পরিধি। এখন ২ শতাধিক ফুলের ৪০০ প্রজাতির মতো ফুল চাষ হচ্ছে। নিজের স্বপ্নের এ উদ্যোগের নাম রেখেছেন স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ। সারাবছর স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজে ফুল ফুটলেও শীত মৌসুমে যা বেড়ে কয়েকগুণ। এ বাগানে গাঁদা, জিনিয়া, দেনথাস, সিলভিয়া, সিলোসিয়া, সূর্যমুখী, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, কসমস, ডালিয়া, পিটুনিয়া, স্টার ফুল, গ্লাডিওলাস, নয়নতারা, গোলাপ, ডায়েন্থাস, জবা, স্থল পদ্ম, রঙ্গন, চায়না টগর, ফাস্ট লাভ, মেলাপোটিয়াম, কাটা মুকুট, সিজিয়াম, অর্কিড, শিউলী, রক্ত জবা, নিমঝাউ, পাতাবাহার, মেহেদী, এলোভেরা, লেনঠেনা, সিজিয়াম, বাগান বিলাস, অ্যারোমেটিক জুই, কাঠ গোলাপ, অপরাজিতা, হাসনাহেনা, করবী, নীল মনি লতা, দোলনচাঁপা, বেলিসহ ২০০ ধরনের ফুল চাষ হচ্ছে।
যা এখন বাণিজ্যিক চাষাবাদে রূপান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের কাছে নতুন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এগ্রো ইকো ট্যুরিজম ধারণার দিকে এগোচ্ছে এ উদ্যোগ। প্রতিদিন বিকেলে এ ফ্লাওয়ার ভিলেজে স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শণার্থীরা ঘুরতে আসছেন। নাম মাত্র প্রবেশ ফিতে ফ্লাওয়ার ভিলেজে এসে খুশি নানা বয়সী দর্শনার্থী। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ফ্লাওয়ার ভিলেজের এক প্রান্তে ছোট একটি কফি কর্ণার-কাম-রেস্টুরেন্ট এবং বিভিন্ন প্রান্তে ফটো বুথ তৈরি করা হয়েছে।
রাঙামাটির নানিয়ারচর থেকে ঘুরতে আসা কাজল চাকমা জানান, ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। একসঙ্গে এত ফুলের সঙ্গে পরিচিত করানোর এমন সুযোগ তিন পার্বত্য জেলার আর কোথাও নেই। একদিকে যেমন ঘোরাঘুরি হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এক কথায় ভালো উদ্যোগ।
মহালছড়ির বাসিন্দা মিতা ধর জানান, মহালছড়িতে বিনোদনের তেমন সুযোগ নেই। স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ হওয়ার পর এখন মাঝেমধ্যে বিকেলে ঘুরতে আসি। সময় কাটায়, ছবি তুলি। খুব ভালো সময় কাটে ফুলের সঙ্গে। খাগড়াছড়ির বাসিন্দা দিদারুল আলম জানান, প্রায় সময় এখানে এসে চেনা-অচেনা ফুল দেখি। পছন্দ করে বাড়িতে নিয়ে যায়। আজকেও এসেছি বারান্দার জন্য ফুলের চারা নিতে। উদ্যোক্তা খালেদ মাসুদ সাগর বলেন, কৃষি খাতের প্রতি আগ্রহ থাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি আগে থেকে ফল বাগান ও নার্সারী করতেন।
গ্র্যাজুয়েশন শেষে চাকরি ও আইনপেশায় যেতে মন টানেনি। তাই পুরোদস্তর কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে শুরু করি। খাগড়াছড়িতে বিশেষ করে মহালছড়ির আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাই আমার পাশাপাশি অন্যান্যদের এ খাতে আসতে উদ্বুদ্ধ করছি। স্থানীয়ভাবে কৃষি বিভাগ কোন সহযোগিতা না করলেও কেউ যদি চান, আমি যা জানি তা থেকে নতুন উদ্যোক্তাদের পাশে থাকব। আগামীতে আরো বেশি মানুষকে এ উদ্যোগ সম্পর্কে জানান দিতে ফুল উৎসব করার পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, খাগড়াছড়ির আবহাওয়া ফুল চাষের উপযোগী। যদি কেউ ক্ষুদ্র পরিসরেও দেশি-বিদেশি প্রজাতির ফুল চাষ করেন তাহলে লাভবান হবেন। কারণ ফুলের বাণিজ্যিক চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।