ঢাকা ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না

হাইকোর্টের রায়
অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না

অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না, গাছ কাটার আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডিএজি মো. শফিকুর রহমান, মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবীর রোমেল। পরে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, সারা দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণ বন্ধ করে মানুষের জীবন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবি ২০২৪ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। উক্ত রিট পিটিশন শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ৭ মে আদালত বিবাদীদের প্রতি, ‘ঢাকার দুই সিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটা কেন মানবাধিকারের পরিপন্থি হবে না এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী বপনকৃত গাছ না কেটে বরং উক্ত গাছের মূল্যের সমপরিমাণ টাকা কেন বপনকৃত ব্যক্তিদের প্রদান করা হবে না এবং গাছ কাটতে হলে সকল পর্যায়ে কেন ৭ সদস্যর কমিটির হতে অনুমোদন নিতে হবে না’ এই মর্মে রুল জারি করা হয়। সেই রুলে শুনানি শেষে হাইকোর্ট কতিপয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আদালত রায়ে বলেন, দেশে দিন দিন তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক সংখ্যক গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, ব্যাপকভাবে গাছ কর্তন করা হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকারকে খর্ব করবে। আদালত আরো বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য যে পরিমাণ গাছ বাংলাদেশে থাকা দরকার সে পরিমাণ গাছ নেই এবং এই গাছগুলোকে রক্ষা করা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। শুনানিতে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, বাংলাদেশে দিন দিন গাছ কাটার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং একটি দেশে যে পরিমাণ গাছ থাকা দরকার সেই পরিমাণ গাছ বাংলাদেশ নেই। আর এর মধ্যে আরো বেশি গাছ কাটা হয় তাহলে তা হবে পরিবেশের জন্য হুমকির সমান। এই কারণে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে লাগান গাছ না কেটে বরং যারা গাছ বপন করেছে তাদের গাছের মূল্য পরিশোধ করা উচিত। তিনি আরো বলেন, গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অনুমিত একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং তাদের কাছ থেকে গাছ কাটার অনুমতি দেয়ার নির্দেশনা প্রার্থনা করেন। সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে গাছ কাটার অনুমতি নেয়ার জন্য পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসরদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সাত দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার ইস্যু করে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের অধ্যাপক, সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা সিভিল সার্জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে, যারা জেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতি প্রদান করবেন। আদালত আরো একটি আদেশে জনপ্রশাসন সচিবকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি একটি সার্কুলার ইস্যু করে উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড এবং এলজিইডির নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়, যারা উপজেলা পর্যায়ের গাছ কাটা সম্পর্কে অনুমতি প্রদান করবে। এছাড়াও রায়ে আরো উল্লেখ করা হয় যে, সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪-এর অধীনের রোপণকৃত গাছসমূহ কাটা যাবে না। বরং গাছের সমমূল্যে টাকা রোপণকারীকে প্রদান করতে হবে। এই মর্মে সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় পরিবর্তন আনায়নেরও নির্দেশনা প্রদান করেন। রিটকারীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এখলাস উদ্দিন ভুঁইয়া ও অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত