ঢাকা ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ

সাড়ে চার মাসে ১৭৪ সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ২৩

সাড়ে চার মাসে ১৭৪ সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ২৩

সাড়ে চার মাসে দেশে গ্রামীণ পর্যায়ে ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।

গত বছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ১৭৪টি ঘটনায় ২৩টি হত্যাকাণ্ড, ৯টি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর, ১৫টি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, ৩৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট বা অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।

তারা আরো অভিযোগ করেন, ৪০তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮০৪ জন সাব-ইন্সপেক্টরকে ২১ অক্টোবর থেকে ৪ ধাপে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুত ৩২১ জনের মধ্যে ১০৩ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এছাড়া, ৫৫ জন নারী কর্মকর্তার মধ্যে ৩৩ জন অব্যাহতি পেয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ১৬ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশ আইন ও বিধির বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারা আরো বলেন, ৪৩তম বিসিএসে ২২৭ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৮২ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে তাদের বক্তব্য ছিল, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান একসাথে যুদ্ধ করেছে। তারা সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করে বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৈষম্য অস্বীকারের সমতুল্য।

জাতীয় সংসদে ৬০টি আসন সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটের ব্যবস্থার বিষয়ে বলা হয়, বিগত সাত দশকের অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্যের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অগ্রসরমাণ জনগোষ্ঠী থেকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানের ২৮ এর ৪ অনুচ্ছেদের আলোকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটে সংখ্যালঘুদের জন্য ৬০টি আসন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবির মধ্যে আরো রয়েছে দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের আইনের যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং সব সংখ্যালঘু ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্ম পালনে অধিকতর উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সরকারি ছুটিসমূহের অতিরিক্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটির ঘোষণা করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত