জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। দাবি আদায় না হলে ভোট বর্জনেরও হুঁশিয়ারি দেন তারা। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়। লিখিত বক্তব্যে মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. প্রদীপ কুমার পাল বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দেশীয় ও বৈদেশিক রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট। মাইনোরিটি কার্ড এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজনীতিবিদ এমনকি আমেরিকার নির্বাচনেও বাংলাদেশের মাইনোরিটি ইস্যু তাদের ভোট বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে। অথচ স্থায়ী সমাধানের কথা কেউ বলছে না। অথচ মাইনোরিটি ইস্যু নিয়ে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এক ভীতিময় পরিবেশে বসবাস করছে। প্রতিনিধিত্বহীনতায় হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মাইনোরিটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উজ্জ্বল করতে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে জাতীয় সংসদসহ সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জোড় দাবি জানায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। নির্বাহী সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই এ দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মনোনয়ন দেয় নাই। সরকারি হিসাব মতে ১২ শতাংশ সংখ্যালঘু হলেও সংখ্যালঘুদের ৪২টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু যৌথ নির্বাচনের কারণে স্বাধীনতার ৫৫ বছরে কোনো সংসদেই হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি পাঠাতে পারে নাই। বিএনপি থেকে মাত্র ১ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ২-৩ জন, আওয়ামী লীগ থেকে ৬-১৫ জন এমপি হতে পেরেছে। অর্থাৎ আগামীর পার্লামেন্ট হিন্দু শূন্য বা নামে মাত্র ২/১ জন থাকার সমূহ সম্ভবনা। তিনি বলেন, সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ সংগঠন একমাত্র হিসেবে কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার যৌক্তিক কারণসহ প্রস্তাব পেশ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দুটি কমিশনই হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি ও প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেছে। কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছে সেখানে উচ্চ কক্ষ বা নিম্ন কক্ষ কোনো জায়গাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখে নাই। আমরা খুব উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি ১৯৪৭ সাল থেকেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্লাকমেইল করেছে এবং এখনো করছে। আমরা আশা করেছিলাম ড. ইউনূসের মতো সজ্জন ব্যক্তি এবং তার নিয়োগ করা কমিশন সদস্যদের হাত দিয়ে বিলুপ্তির পথে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায় রক্ষা পাবে। কিন্তু আমাদের সে আশা ভুল ছিল। আমরা আশাভঙ্গ হয়েছি।
মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, এখনো সময় আছে। সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি যেন আমলে নিতে পারেন। হিন্দু সর্বশেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। বর্তমান সরকার যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবি জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সবক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা মেনে না নেন তাহলে হিন্দু সম্প্রদায় কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং ভোট কেন্দ্রে যাবে না। অন্যকে ক্ষমতায় বসানোর হাতিয়ার হওয়ার জন্য এবং শুধু শুধু মারধর খাওয়া আর বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর জন্য হিন্দু সম্প্রদায় আগামী কোন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য সহ-সভাপতি দুলাল কুমার মন্ডল, তরুণ কুমার ঘোষ, নিতাই দে প্রমুখ।