গণঅভ্যুত্থান এ জাতির নতুন সূর্যোদয়। এটি মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উদ্দীপ্ত, সমাজব্যবস্থা নতুন কাঠামোয় গড়তে বদ্ধপরিকর। এমন সময়ে একুশে বইমেলা, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান প্রতীক, হতে পারে জাতির পুনর্জাগরণের শক্তিশালী মাধ্যম। গণঅভ্যুত্থানের পর এই মেলার ভূমিকা আারো গভীর ও ব্যাপক হওয়া উচিত, কারণ এটি হতে পারে নতুন চিন্তা, মূল্যবোধ ও জাতিগত ঐক্যের সেতু। গণঅভ্যুত্থানের পর একুশে বইমেলা শুধু বই বিক্রির স্থান নয়; এটি হতে হবে মত প্রকাশের মুক্তমঞ্চ। এখানে বিভিন্ন চিন্তাধারা, সাহিত্যধারা ও সংস্কৃতির প্রবাহ সম্মানের সঙ্গে জায়গা পাবে। এখানে ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য এবং রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে মুক্ত আলোচনা হোক। মেলায় ইসলামি দর্শনের পাশাপাশি আধুনিক সাহিত্য, বিজ্ঞানমনস্ক গ্রন্থ ও বিপ্লবী চিন্তার প্রকাশ ঘটুক। ইসলামি ধারার সাহিত্য ও প্রকাশনা যা দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার আলোচনার বাইরে থেকেছে, সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। ইসলামি লেখকদের সাহিত্যচর্চা, যা মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ, নতুন প্রজন্মকে সাম্য ও সহমর্মিতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে। গণঅভ্যুত্থানের পর সমাজ নতুনভাবে গড়ে উঠছে, এখানে ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি ধারার লেখক ও প্রকাশকদের জন্য একুশে বইমেলায় বিশেষ স্থান নির্ধারণ করা উচিত। তাদের সাহিত্য শুধু ধর্মীয় চেতনা নয়, বরং নৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, ও আত্মোপলব্ধির মাধ্যম। যেমন, কিশোর-তরুণদের জন্য রচিত নৈতিক শিক্ষামূলক গল্পগুলো নতুন প্রজন্মকে ন্যায়ের পথে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
মেলায় ইসলামি প্রকাশকদের বই সহজলভ্য ও পাঠকের কাছে উপস্থাপন করার জন্য আলাদা কর্নার তৈরি করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি ইসলামি সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে সেমিনার, আলোচনা সভা এবং বই পাঠের আয়োজন করলে এই ধারার গভীরতা ও সৌন্দর্য পাঠকদের মাঝে তুলে ধরা সম্ভব। এবাবের একুশে বইমেলা হতে হবে আরও সুসংগঠিত ও পরিচ্ছন্ন। এখানে বাণিজ্যিকীকরণের বদলে জ্ঞান, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির বিকাশই হবে মুখ্য। বইয়ের দাম মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সাধ্যের মধ্যে রাখা উচিত, যাতে প্রতিটি শ্রেণি এই জ্ঞানচর্চার অংশ হতে পারে। শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজন যেমন শিশুতোষ বই, কুইজ প্রতিযোগিতা এবং নৈতিক শিক্ষামূলক গল্প পাঠের আয়োজন করা যেতে পারে।