ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

বাঁশের পণ্য তৈরি করে সফল নারী উদ্যোক্তা

বাঁশের পণ্য তৈরি করে সফল নারী উদ্যোক্তা

টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারো কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে ব্যবহার্য তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রি করে সংসারের সফলতা ফিরিয়ে আনতে স্বপ্নের জাল বুনছেন চিত্রা নকরেক। প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের আদি ইতিহাস কৃষ্টি ও সংস্কৃতিগুলো তুলে ধরতে। বাহারি কারুকাজে নিপুণ নিখুঁত হাতে তৈরি করছেন বাঁশের ৫০ রকমের তৈজসপত্র। নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় গারো- কোচ নারী পুরুষেরও কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন তিনি। আর এ কাজটির নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গারো সম্প্রদায়ের উদ্যমী নারী চিত্রা নকরেক। চিত্রা নকরেকের বাড়ি মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের পীরগাছা গ্রামে। সরজমিনে চিত্রা নকরেক জানান, তিনি শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে ৬ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতেই বিলুপ্ত প্রাায় গারো সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে ব্যবহার্য বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র তৈরির কাজ করছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি কারখানাও গড়ে তুলেছেন মধুপুরের গারো পল্লীর ফুলবাগ চালা ইউনিয়নের পীরগাছা এলাকায়। তার কারখানার নাম দিয়েছেন চিত্রা হেন্ডিক্রাপ্ট। এলাকা থেকে এ শিল্পের কাঁচামাল ঝাপা জাতীয় বাঁশ কিনে কারখানায় এনে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন।

তিনি আরো জানান, কারখানায় তৈরি হচ্ছে গারোদের আদি ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি- সংস্কৃতির বাঁশের তৈরি চুঙা, কুলা, টংঘর, কথথপ, ফুলদানি, ডাস্টবিন, ওয়ালমেট, শোপিচ, ল্যাম্প বাতির বক্স, আদি হ্যাজাক বাতির বক্স, গারো মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী নাচের কুলা, নাচের থুরাসহ প্রায় ৫০ ধরনের শৌখিন নানা তৈজসপত্র। স্থানীয় ১৫-২০ জন গারো কোচ নারী-পুরুষ কর্মচুক্তিভিত্তিক তৈরি করেন প্রায় ৫০ ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র। কারখানার কাজ করা নারী শ্রমিকরা জানান, কারখানার কাজ করে তারা মাসে ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছে। সংসারের কাজের পাশাপাশি এখানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে স্বামীর উপার্জনের সাথে অতিরিক্ত জোগান দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তাদের পরিবার পরিজন।

৬ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিলেও অর্থসংকটে কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারছিলেন না তিনি। ৩ বছর আগে ছোট পরিসরে কারখানা গড়ে তুলেন তিনি। তার কারখানার তৈরি জিনিসপত্র স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদাও মেটাচ্ছে। তাই কারখানাটি বড় পরিসরে গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা চান নারী উদ্যোক্তা চিত্রা নকরেক। জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, চিত্রা নকরেক বাঁশের বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র তৈরি করে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চিত্রা নকরেকের মাধ্যমেই গারো সম্প্রদায়ের বিলুপ্ত প্রায় ব্যবহার্য জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব মনে করেন তিনি। এছাড়া তার এ উদ্যোগ গারো সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখতে পারে।

মধুপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়া জানান, তার কারখানায় তিনি কয়েকবার ঘুরে এসেছেন। একজন আত্মবিশ্বাসী নারী হিসেবে চিত্রা নকরেক নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় আরো নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তার তৈরি পণ্য দেশের বাইরেও যাচ্ছে। সে অন্যান্য নারীদের জন্য অনুকরণীয় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মাতৃতান্ত্রিকতা আত্মপ্রত্যয়ী দৃঢ় মনোবলের কারণে সে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত