ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সমুদ্রের বিশাল মালী তিমি

সমুদ্রের বিশাল মালী তিমি

তিমি এক বিশালাকার জলজ প্রাণী। অনেকে মাছ বললেও এরা কিন্তু মাছ নয়, বরং মানুষের মতোই স্তন্যপায়ী প্রাণী। কারণ মাছের শ্বাস নেয়ার জন্য ফুলকা থাকে কিন্তু তিমির রয়েছে ফুসফুস। অন্যান্য জলজ প্রাণীর চেয়ে তিমি ভিন্ন। এরা নিজেরাই ঠিক করে কখন শ্বাস নেবে বা কখন, কীভাবে ঘুমাবে। এরা এক চোখ খোলা রেখে ঘুমায়। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সুরেলা গানও গায় এরা। এসব ছাড়াও দূরদূরান্তে পুষ্টি ছড়িয়ে দিয়ে সমুদ্রকে সুস্থ রাখতেও সহায়তা করছে তিমি। কিন্তু কীভাবে? এ বিশালাকার প্রাণীরা কেবল সমুদ্রজুড়ে সাঁতারই কাটে না, বরং প্রস্রাব, বিষ্ঠা ও এদের ঝরেপড়া ত্বকের মাধ্যমে গভীর, ঠান্ডা পানি থেকে উষ্ণ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাঠাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

তিমিরা গভীর পানির নিচে খাবার খেলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে মলত্যাগ করে, যা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামের ক্ষুদ্র সামুদ্রিক উদ্ভিদের খাবারের যোগান দেয়- এ বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই জানেন বিজ্ঞানীরা।

তারা বলছেন, এসব উদ্ভিদই সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খলের মূল ভিত্তি। মাছ, হাঙ্গর ও অন্যান্য অনেক সামুদ্রিক প্রাণীরা খাবার হিসেবে এসব উদ্ভিদ খায়। এখন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভারমন্ট’-এর নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, পুরো সমুদ্রের অববাহিকা জুড়েই বিপুল পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পাঠায় তিমি। প্রতি বছর ঠান্ডা ও পুষ্টিকর পানি থেকে প্রায় চার হাজার টন নাইট্রোজেন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হাওয়াইয়ের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পাঠায় এরা।

৪৫ হাজার টনেরও বেশি জৈব পদার্থ বহন করে তিমি। মানুষ তিমি শিকার শুরুর আগে এই পুষ্টিকর উপাদান পাঠানোর পরিমাণ ছিল বর্তমানের চেয়ে প্রায় তিনগুণ!

সমুদ্রজুড়ে পুষ্টিকর উপাদান ছড়িয়ে দিতে এক চলমান পরিবাহক বেল্টের মতো কাজ করে তিমি। যেমন ‘হ্যাম্পব্যাক’ প্রজাতির তিমি আলাস্কার মতো জায়গায় ক্রিল ও হেরিং খেয়ে প্রতিদিন নিজেদের প্রায় ৩০ পাউন্ড ওজন বাড়ায়। এরপর শীতকালে বংশবৃদ্ধি ও সন্তান জন্ম দিতে হাজার হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পাড়ি দেয় তিমি। উষ্ণ পানিতে থাকাকালীন তিমি খাবার না খেলেও প্রস্রাব, নিজেদের ত্বক ঝরিয়ে ফেলা ও সন্তান জন্মদানের সময় প্লাসেন্টা বের করে দেয়ার মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান সমুদ্রে ছড়িয়ে দেয়। যেমন ‘ফিন’ প্রকৃতির তিমি প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ’ গ্যালনেরও বেশি প্রস্রাব করে। এদের প্রস্রাবে রয়েছে নাইট্রোজেন, যা সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীর ও মাছের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। এ প্রক্রিয়াটিকে ‘গ্রেট হোয়েল কনভেয়ার বেল্ট’ নামে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, বড় আকারের বিভিন্ন খাবারের অঞ্চল থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে তা ছোট আকারের অঞ্চলে ছেড়ে দেয় তিমি। হাওয়াইয়ের মতো অঞ্চলের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ অঞ্চলে সমুদ্রের পানির স্বচ্ছতা ও পুষ্টির মাত্রা কম। এ অঞ্চলের পানিকে সার দিয়ে সহায়তা করে সমুদ্রকে আরও উৎপাদনশীল করে তোলে তিমি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত