ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আকাশে লাল বজ্রপাত

আকাশে লাল বজ্রপাত

কখনও কি লাল বজ্রপাতের কথা শুনেছেন? ‘ রেড স্প্রাইটস’ নামে পরিচিত এই অবিশ্বাস্য ঝলকানি হচ্ছে বৈদ্যুতিক স্রাব, যা বজ্রপাতের উপরে ঘটে। এগুলো দেখতে আকাশে জ্বলজ্বল করা লাল জেলিফিশের মতো। এখন, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত অর্থাৎ হিমালয়ের উপরে এসব বিরল আলোর ঝলকানি দেখার বিষয়টি একবার কল্পনা করুন। ২০২২ সালের ১৯ মে মাসে হিমালয়ের উপরে একশটিরও বেশি অবিশ্বাস্য এসব আলোর ঝলকানির বিস্ময়কর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন দুই চীনা জ্যোতির্বিদ অ্যাঞ্জেল আন ও শুচাং ডং। তাদের পর্যবেক্ষণ স্থানটি ছিল তিব্বত মালভূমির একটি পবিত্র হ্রদ ‘পুমোয়ংকুও’ হ্রদের কাছে। তারা যেসব ছবি ধারণ করেছিলেন তাতে এক শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা উঠে এসেছে, যা রীতিমতো মুগ্ধ করেছে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষকে। লাল স্প্রাইটের পাশাপাশি অন্যান্য বিরল বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনাও রেকর্ড করেছিলেন আলোকচিত্রীরা। যার মধ্যে রয়েছে ‘ডান্সিং স্প্রাইটস’ ও এশিয়ায় প্রথমবারের মতো দেখতে পাওয়া ‘ঘোস্ট স্প্রাইটস’-এর ঘটনা, যা রাতের বেলায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় স্তর আয়নোস্ফিয়ারের গোড়ায় দেখতে পাওয়া সবুজ এক আভা। এ আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ও প্রধান গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়ে উঠেছে।

এ দর্শনীয় ঘটনার ব্যাখ্যা মিলেছে চীনের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র অধ্যাপক গাওপেং লু ও তার গবেষণা দলের করা গবেষণায়, যেটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাডভান্সেস ইন অ্যাটমোস্ফিয়ারিক সায়েন্সেস’-এ।

যে কারণে হয় : গবেষণা অনুসারে, এসব রেড স্প্রাইট তৈরি হয়েছে মেঘ থেকে মাটিতে শক্তিশালী বজ্রপাতের ফলে। এসব বজ্রপাত হয়েছিল গাঙ্গেয় সমভূমি থেকে তিব্বতীয় মালভূমির দক্ষিণ পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল এক ঝড়ের কারণে। গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ও বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে বজ্রপাত তৈরি করতে পারে হিমালয়। ঘটনাটি সঠিকভাবে বিশ্লেষণের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ঠিক কোন সময়ে এমনটি ঘটেছে সে তথ্য জানার প্রয়োজন ছিল গবেষকদের। তবে মূল রেকর্ডিংয়ে সঠিক সময়ের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। এ সমস্যা সমাধানের জন্য স্যাটেলাইট ট্র্যাজেক্টরি ও তারার ফিল্ড বিশ্লেষণ ব্যবহার করে এক নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন গবেষকরা। এ কৌশলটি তাদের প্রতিটি স্প্রাইট ঠিক কখন হয়েছিল তা নির্ধারণ করতে ও এর মূল বজ্রপাতের সঙ্গে সংযোগ করতে সাহায্য করেছে। গবেষণার একজন পর্যালোচক এই পদ্ধতির প্রশংসা করে বলেছেন, নাগরিক বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের জন্য কার্যকর হতে পারে এই কৌশল। যে ঝড়ের কারণে এসব স্প্রাইটের তৈরি হয়েছিল তা দক্ষিণ এশিয়ায় রেকর্ড করা সবচেয়ে সক্রিয় ঝড়গুলোর মধ্যে একটি, যেখানে একটি বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছিল স্প্রাইট।

গবেষণায় দেখা গেছে, এ অঞ্চলের বিভিন্ন ঝড় যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রেট প্লেইনস’ ও ইউরোপের শক্তিশালী ঝড়ের মতো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরে বজ্রপাত তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত