পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এরইমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। গতকাল শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানী হয়েছে। অনেকে আহতও হয়েছেন।
নাটোরে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে সেনাসদস্য নিহত, আহত ৫ : নাটোরের গুরুদাসপুরে যাত্রীবাহী বাস ও সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষে আল মামুন নামে এক সেনাসদস্য নিহত হয়েছে। এ সময় অন্তত আরও ৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিহত আল মামুন নাটোর সদর উপজেলার বড়বাড়িয়া লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত ওছিম উদ্দিনের ছেলে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের কাছিকাটা ১০ নং ব্রিজ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নাটোরের বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন ও স্থানীয়রা জানান, নাটোর থেকে ঢাকাগামী আরপি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বনপাড়া- হাটিকুমরুল মহাসড়কের কাছিকাটা ১০ নং ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাকের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পার্শে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় মামুন। এ ঘটনায় আরো অন্তত ৫ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রাকটি জব্দ করে। এদিকে দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক ও হেলপার পলিয়ে যায়। পরে লাশটি উদ্ধার করে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হবে।
ভোলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু : ভোলার বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকলে আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে টবগী ইউনিয়নের নায়েব বাড়ির দড়জায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ইট বোঝাই ট্রলি চাপায় মো. রায়হান (২৬) নিহত হন। নিহত রায়হান উপজেলার টবগী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম মাওলা পাটওয়ারীর ছেলে। তিনি ভোলার লালমোহন উপজেলায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
অপরদিকে, একই দিন দুপুর সোয়া ১টার দিকে চরফ্যাশন উপজেলার বিআরডিবি মোড় এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মো. আব্দুর রহমান নামের এক যুবক নিহত হন। তিনি পটুয়াখালী জেলার বাসিন্দা ও স্কয়ার কোম্পানির চরফ্যাশন উপজেলার এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে রায়হান নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তিনি স্থানীয় নায়েব বাড়ির দড়জায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ইটবোঝাই একটি ট্রলির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে পড়ে যান। এ অবস্থায় ট্রলির চাকার নিচে তার মাথাচাপা পড়ে। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বোরাহানউদ্দিন থানার ওসি (তদন্ত) নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, দুপুর সোয়া ১টার দিকে আব্দুর রহমান নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে শহরের দিকে আসছিলেন। এ সময় বাজারের দক্ষিণ পাশে বিআরডিবি মোড় এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
বোনের বাড়িতে ঈদ উপহার দিয়ে ফিরছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু : সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই ছোট বোনের শ্বশুরবাড়িতে সেমাই-চিনিসহ ঈদের উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন মো. রিফাত (২৫)। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের সোনাপুর-চেয়ারম্যানঘাট সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রিফাত জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার কোটবাড়িয়া গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিফাতের বোনের শ্বশুরবাড়ি সুবর্ণচর উপজেলার হারিছ চৌধুরীর বাজার এলাকায়। গতকাল বিকেলে সেখানে ঈদ উপহার নিয়ে যান তিনি। পরে রাতে সেখান থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সোনাপুর-চেয়ারম্যানঘাট সড়কে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এ সময় রিফাত গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিফাতের বোনের শ্বশুর মো. সবুজ ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলী আজম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পথচারীকে চাপা দিয়ে পালানোর সময় নসিমনে ধাক্কা ট্রাকের, নিহত ২ : বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২১ জন। গতকাল শুক্রবার সকালে শেরপুর-ধুনট আঞ্চলিক সড়কের রনবীরবালা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাজর গ্রামের মৃত কছিম উদ্দিনের ছেলে হারুন অর রশিদ (৪৮), ও হোসনাবাদ গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান প্রামানিকের ছেলে হানিফ উদ্দিন (৩৬)। আহতরা হলেন- সুন্দরী (৪৫), বসন্তী (৫০), সুর্বতি (৪৫), চায়না (৪০), পবিত্র (৪৫), স্বরসতি (৫৫), সাগরিকা (৫০), সুনিল (৫০), মনন্তর (৪৮), পয়ত্রি (৫২), মো. সাত্তার (৬০), বাসরি (৫০), বাশরি (৫০), ক্ষন্নষশি (৫০)। আহতরা সবাই খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাজর এলাকার বাসিন্দা।
দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজন সাতজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় তাদের নামপরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ট্রাকটি রাস্তায় দাঁড়ানো এক ব্যক্তিকে চাপা দিয়ে পালানোর সময় শ্যালোমেশিনচালিত নসিমনকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাক ও নসিমন দুটোই উল্টে যায়। এ সময় পথচারী ও নসিমনের এক যাত্রী নিহত হন। নসিমনে ১৮ জন নারি ও ৫ জন পুরুষ ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল বলেন, ট্রাকটি ধুনটের দিক থেকে আসছিল। এ সময় রনবীরবালা বশীর পগলা মাজারের কাছে রাস্তার দাঁড়িয়ে থাকা হানিফ নামের একজনকে চাপা দেয়। এর ২০০ গজ দূরে এসে আবার কাজের উদ্দেশে যাওয়া যাত্রীবাহী ভটভটিকে ধাক্কা দিয়ে ট্রাক ও ভটভটি উল্টে যায়। এতে পথচারী হানিফ ও ভটভটিতে থাকা হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় আরো ২১ জন আহত হন।
দুর্ঘটনায় আহতরা বলেন, আমরা সকালে ঝাজর এলাকা থেকে নসিমনে করে ১৭ জন মহিলা ও ৫ জন পুরুষ আলু তোলার কাজে কুসুম্বি যাচ্ছিলাম। এ সময় রনবীরবালা এলাকায় পৌঁছালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ওয়্যার হাউজ ইনচার্জ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতের উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।