ফেনীতে বন্যার পলি আশীর্বাদ হয়ে তরমুজ আবাদ বেড়ে চাষ হয়েছে ৭৬১ হেক্টর জমিতে। বিগত বছর মৌসুমে জেলায় আবাদ করা তরমুজের বাজার ছিল প্রায় ১০৫ কোটি টাকার। চলতি মৌসুমে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশাবাদ চাষি ও সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যয় নেমে আসে ফেনীসহ আশপাশের অঞ্চলে। সেই বন্যায় জীবন-জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্যায় সৃষ্ট পলি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তরমুজ চাষাবাদে। চলতি মৌসুমে বন্যার এই পলির কারণে ফেনী অঞ্চলে তরমুজের আবাদ বেড়েছে। কমেছে সার-কীটনাশকসহ চাষাবাদের খরচ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যাম্পার ফলনে এবার ভালো দাম পাওয়া নিয়েও আশাবাদী চাষিরা।
ফেনী সদর উপজেলার আমিন বাজারের পাশের ফসলি মাঠ। বন্যায় ডুবে যাওয়ার পর হয়নি ধান। সেই মাঠের ৪০ একর জমিতে বিকল্প হিসেবে চাষ হয়েছে তরমুজের। স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তারা জানান, বন্যা অনেকভাবে ক্ষতি করলেও এর ফলে জমাকৃত পলি হয়ে এসেছে আশীর্বাদ হিসেবে। এই অঞ্চলে তরমুজ চাষে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। এরই মধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে আগাম চাষাবাদের তরমুজ। ধর্মপুরের তরমুজ চাষি মাঈন উদ্দিন বাচ্চু জানান, তিনি ২৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে এবং রমজানের বাজারে চাহিদা থাকায় বিক্রি হয়েছে আশানুরূপ। তরমুজ চাষি জান্নাত এগ্রোর পরিচালক তোফায়েল রনি ও ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, গেলবারের বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের কৃষি প্রকল্প। ঘুরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে তারা তরমুজের আবাদকে বেঁচে নিয়েছে। ৪০ একর জমিতে তরমুজ আবাদে ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ হলেও সব ঠিক থাকলে বিক্রি এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তাদের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে জেলার উপকূলীয় জনপদ সোনাগাজীর চরাঞ্চলেও বেড়েছে তরমুজের চাষ। চাষিরা জানান, বন্যায় সৃষ্ট পলি এ মৌসুমে বেড়েছে তরমুজের উৎপাদন। বন্যার পলি জমায় কমেছে সারের খরচও। সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া এলাকার তরমুজ চাষি আবুল কালাম জানান, বন্যার পরে ফসলের মাঠে পলি জমেছে। এর ফলে সেই পলিতে তরমুজের আবাদ ভালো হচ্ছে। সারের খরচও কমেছে অনেক। আগে একর প্রতি সার লাগতো সাড়ে ৪০০ কেজি, এবার ৩০০ কেজি। ওই এলাকার চাষি মো. মাসুদ উদ্দিন বলেন, গাছের বয়সের আলোকে বৃদ্ধি ভালো। বৃষ্টি ও বড় ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যা না থাকলে চলতি বছর তরমুজের আবাদ ভালো হবে।
এছাড়াও জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর, ফুলগাজী, পরশুরাম এবং দাগনভূঞাঁ উপজেলার জায়লস্করসহ কিছু অঞ্চলেও বেড়েছে তরমুজের আবাদ। কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, অনুকূল পরিবেশ হিসেবে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে চলতি মৌসুমে ফেনীতে তরমুজের উৎপাদন বিগত বছরের রেকর্ডকে অতিক্রম করবে এবং বিক্রি হবে কয়েকশ’ কোটি টাকা। ফেনী জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, বিগত বছরগুলোর চেয়ে জেলায় তরমুজের আবাদ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে সোনাগাজী উপজেলায়। এখানকার চরের ৬০০ হেক্টরের বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে রসালো ফল তরমুজ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ফেনীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, গেল মৌসুমে ফেনীতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল ৬২৬ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ২৯ হাজার ১৩৭ টন তরমুজ। চলতি মৌসুমে তরমুজের আবাদ হয়েছে ৭৬১ হেক্টর। আবাদ বেড়েছে ১৩৫ হেক্টর জমিতে।