দেশের ডালজাতীয় ফসলগুলোর মধ্যে খেসারি কলাই অন্যতম, যা বর্তমানে কৃষকদের জন্য লাভজনক চাষাবাদের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে বগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনা নদীর চরে খেসারি কলাই চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে কাটা-মাড়াই শেষে তারা ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেসারি চাষে খরচ কম, পরিশ্রম কম এবং লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তারা দিন দিন এই ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন শাক-সবজির বড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ায় এবং গো-খাদ্য হিসেবেও এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজারে এটি দারুণভাবে বিক্রি হচ্ছে।
চরের কৃষক হালিম জানান, খেসারি কলাই চাষে তুলনামূলক পরিশ্রম কম এবং সার, সেচ ও কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। বিঘা প্রতি চাষ খরচ মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার টাকা, যেখানে ফলন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ। দুই মাসের ব্যবধানে খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা বিঘাপ্রতি ১২-১৪ হাজার টাকা লাভ করছেন। পুকুরিয়া এলাকার কৃষক আবু তালেব বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও এবার খেসারির ফলন ভালো হয়েছে। আমরা বিশেষ রিলে ফসল পদ্ধতি অনুসরণ করছি, যা জমির উর্বরতা বাড়ায় এবং চাষের খরচ কমিয়ে দেয়। নভেম্বর মাসে ধান কাটা জমিতে সরাসরি খেসারি বীজ ছিটিয়ে দেয়া হয়, যা ভালো ফলন নিশ্চিত করছে।
দেশের বাজারে খেসারি ডালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, ফলে প্রতিবারই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে এটি আমদানি করতে হয়। তবে আমদানিনির্ভরতা কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয় দেশেই অধিক পরিমাণে খেসারি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে।
ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ছামিদুল ইসলাম বলেন, চরের পতিত জমিতে খেসারি ডাল উৎপাদন করে কৃষকরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় শত বিঘা জমিতে খেসারি কলাই চাষ হয়েছে এবং ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা আরও বেশি লাভবান হতে পারেন এবং ভবিষ্যতে এই চাষ পদ্ধতি অব্যাহত থাকে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, খেসারি কলাই চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, বরং পশুখাদ্য ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কার্যকর। কৃষকদের উদ্যোগ ও সরকারি সহায়তা থাকলে আগামীতে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করাও সম্ভব হবে।