ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

* ‘নেতানিয়াহু ইসরায়েলের বড় শত্রু’ * ইসরায়েলে টানা তৃতীয় দিন ব্যাপক বিক্ষোভ * ইসরায়েলে থাকা মার্কিনিদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি আমেরিকার
ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। গতকাল রোববার ভোরের দিকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও ইয়েমেন থেকে আসা একটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ার আগে ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেয়া হয়। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রোববার ভোরের দিকে সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রে বাধা দেয়া হয়। ইসরায়েলের বিমান বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতি করেছে বলে সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটির কয়েক দফার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রোববারের এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গাজা উপত্যকায় গত মঙ্গলবার ইসরায়েল নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করায় এর পাল্টা হিসেবে ইসরায়েলে হামলার হুমকি দিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এর আগে, শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে ইয়েমেন থেকে ছোড়া আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি জানানো হয়। এদিকে, শনিবার সকালের দিকে ইসরায়েলের বেন গুরিওন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হুথি বিদ্রোহীরা। গত দুই দিনের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে জানায় ইয়েমেনের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী।

বিবৃতিতে হুথি গোষ্ঠী বলেছে, গাজার বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলি আকাশসীমা অনিরাপদ থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ইয়েমেনের হুথিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা শুরু করে। গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, হুথিদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হবে এবং এই গোষ্ঠীকে অব্যাহত সহায়তা দেয়ায় তেহরানকেও সতর্ক করে দেন তিনি।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা শেন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার সরকারি সিদ্ধান্ত এবং গাজায় আবার হামলা শুরুর প্রতিবাদে গতকাল শনিবার রাজধানী তেল আবিবে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে গোয়েন্দা তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার গোয়েন্দাপ্রধান রোনেনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেন, তিনি রোনেন বারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ২০২১ সালে গোয়েন্দা সংস্থা শেন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। রোনেনের বরখাস্তের আদেশ আগামী ১০ এপ্রিল কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়। ইসরায়েলের সুপ্রিমকোর্ট গত শুক্রবার সরকারি সিদ্ধান্তকে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে আদেশ জারি করেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিনি এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তিনি এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, রোনেন বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও এগুলোর ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে চাইছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গত মঙ্গলবার গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাস ও ইসরায়েলের হাতে বন্দিদের মুক্তির জন্য হওয়া ওই চুক্তি গাজাসহ ওই অঞ্চলে খানিকটা স্বস্তি বয়ে এনেছিল। ইসরায়েলের নীল সাদা পতাকা হাতে তেল আবিবের হাবিমা স্কয়ারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান নেন। তারা গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলের বাকি ব্যক্তিদের মুক্ত করে আনতে নতুন করে চুক্তি করার দাবি জানান। প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেয়া মোশে হাহারোনি (৬৩) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় ভয়ানক শত্রু হচ্ছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০ বছর ধরে তিনি আমাদের দেশকে গ্রাহ্য করেননি, আমাদের দেশের নাগরিকদের গ্রাহ্য করেননি।’

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা শুরুর পর থেকে হামাসের হাতে বন্দি ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও সমর্থকরা প্রায় নিয়মিত বিক্ষোভ করে আসছেন। ওইসব বিক্ষোভ সমাবেশে নানা সময়ে নেতানিয়াহু সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বিক্ষোভকারী ইরেজ বারম্যান (৪৪) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা দেড় বছর পর আবারও গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ দেখছি। এখনও গাজার ক্ষমতায় হামাস। এখনও ওই সংগঠনের হাজার হাজার যোদ্ধা রয়ে গেছে। সুতরাং এই যুদ্ধে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার তার লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’

ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর ফলে গাজায় বন্দি ৫৯ ইসরায়েলির ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ইসরায়েলি বন্দির মধ্যে এখনো ২৪ জন জীবিত রয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইসরায়েলি বোমা হামলা শুরুর পর ওই সব বন্দি হয় হামাসের হাতে নিহত হবেন অথবা দুর্ঘটনবশত ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় তাদের প্রাণ যাবে।

নেতানিয়ানিয়াহুর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা অফির ফক রয়টার্সকে বলেন, ‘হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে আমাদের যা করার দরকার, আমরা তা-ই করব।’

অফির ফক বলেন, ‘হামাস সামরিক চাপের বিষয়টি বুঝতে পারছে। একমাত্র সামরিক চাপেই তারা কাবু হবে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এই সামরিক চাপকে কাজে লাগিয়ে ৮০ জন জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে। একমাত্র সামরিক চাপের কারণে তারা আলোচনা টেবিলে এসেছে। আর এখন আমরা আবার সেই কাজটিই করছি।’

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বর্বর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত সপ্তাহ থেকে চালানো নিরলস এই হামলায় নারী ও শিশুসহ নিহত হয়েছেন শত শত ফিলিস্তিনি। তবে থেমে নেই হামাস।

ইসরায়েলি বাণিজ্যিক কেন্দ্র খ্যাত তেল আবিবে রকেট হামলা চালিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস। হামলা হয়েছে লেবানন থেকেও। এমন অবস্থায় ইসরায়েলে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি তাদের নিকটতম আশ্রয়স্থলের অবস্থান জেনে রাখতেও বলা হয়েছে। গতকাল রোববার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস দেশটিতে বসবাসকারী আমেরিকানদের সতর্ক থাকার এবং বৃহৎ বিক্ষোভ ও রকেট হামলার সতর্কতাসহ ‘বর্তমান উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে’ সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বানও জানিয়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে, মার্কিন নাগরিকদের বৃহৎ সমাবেশ এড়িয়ে চলা উচিত এবং নিকটতম আশ্রয়স্থলের অবস্থান জানা উচিত ।

মূলত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে গত সপ্তাহে ইসরায়েলে বেশ কয়েকবার রকেট সাইরেন এবং রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি বাণিজ্যিক কেন্দ্র খ্যাত তেল আবিবে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের নতুন করে স্থল ও আকাশপথে হামলায় বেসামরিক প্রাণহানি বৃদ্ধির প্রতিশোধে গত বৃহস্পতিবার তারা এই হামলা চালায়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেসময় বলেছিল, গাজা থেকে ছোড়া একটি প্রোজাক্টাইল আটকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য দুটি প্রোজেক্টাইল জনবসতিহীন উন্মুক্ত একটি এলাকায় আঘাত হেনেছে। তবে এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেও সেসময় দাবি করে ইসরায়েল। এদিকে ইসরায়েলে রকেট হামলা হয়েছে লেবানন থেকেও। গত বছরের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর প্রথমবারের মতো গত শনিবার লেবানন থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে একাধিক রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলার পর গত চার মাসের মধ্যে লেবাননে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, দক্ষিণ লেবাননে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন কয়েক ডজন রকেট লঞ্চার এবং একটি কমান্ড সেন্টারে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর মিত্র হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল নতুন করে অভিযান শুরু করার পর শনিবার ইসরায়েল-লেবাননে এই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপরই ইসরায়েলে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করল যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাওয়িল নিহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার সকালে এক হামাস কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তার নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ওই বিমান হামলায় হামাসের রাজনৈতিক দফতরের সদস্য বারদাওয়িল ও তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি। গত মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করেছে। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে চলা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল ও হামাসকে দায়ী করে হামলাগুলো চালানো হচ্ছে। হামাস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাল্টা অভিযোগ করেছে যে, কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলই লঙ্ঘন করেছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক নজিরবিহীন হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় অভিযান শুরু করে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তারপর থেকে গাজায় ৪৯,৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ফলে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছে।

ওয়াশিংটনের দুর্বলতা বেরিয়ে পড়েছে : হুথি

ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহ আন্দোলনের নেতা আবদুল মালিক আল-হুথি বলেছেন, তার দেশের জলসীমায় দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের মার্কিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের অটুট পদক্ষেপের কাছে ওয়াশিংটন চরমভাবে ব্যর্থ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত