ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

পেঁয়াজের বীজ চাষে ভাগ্যবদল

পেঁয়াজের বীজ চাষে ভাগ্যবদল

পেঁয়াজের ফুল (কালো সোনা) চাষ করে ভাগ্যবদল করেছে কৃষক আবু তালেব। তিনি চাকরি ছেড়ে এলাকায় এসে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তালেবের ভাষ্য, রোপণকৃত পেঁয়াজ, পরিচর্চা, জমির ইজারাসহ প্রতি বিঘায় খরচ লেগেছে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। সবমিলে ১৯ বিঘা জমিতে বীজ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮-২০ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৫-২০ দিন পরে বীজ ঘরে তুলবেন তিনি। প্রতি বিঘায় গড়ে দুই মণ করে ১৯ বিঘায় প্রায় ৩৮-৪০ মণ ফলনের প্রত্যাশা তার। প্রতিকেজি আড়াই হাজার টাকা দরে প্রায় ৪০-৪২ লাখ টাকা বীজ বিক্রি সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রাম গ্রামীণ সড়কের পাশে জিকে ক্যানাল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বাতাসে দোল খাচ্ছে সাদা সাদা ফুল। কাছে গিয়ে বোঝা গেল এগুলো পেঁয়াজের ফুল বা কদম ফুল। এই সাদা ফুলগুলো শুকিয়ে কিছুদিন পর বের হবে কালো বীজ। যার বাজারে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে ভালো দাম। সেজন্য এটিকে কালো সোনা’ও বলে থাকেন অনেকেই। আর এই ফুলগুলোর মালিক কৃষক আবু তালেব। তিনি সেখানে তিনটি প্লটে প্রায় ১৯ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন। নানা বয়সি নারী-পুরুষ শ্রমিকসহ পরিচর্চা ও হাতের সাহায্যে পরাগায়ন করছেন তালেব।

শনিবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামে সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। তালেব ওই গ্রামের মৃত হাজী গফুর শেখের ছেলে। তিনি চাকরি ছেড়ে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ১৯ বিঘা জমিতে সুপার কিং, লালতীড় কিং ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে ৩৮-৪০ মণ বীজ উৎপাদন হবে তার। যার বাজার মূল্য ৪০-৪২ লাখ টাকা। খরচ বাদে প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা মুনাফা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন এই কৃষক। ফলন বৃদ্ধি ও বীজের গুনগত মান রক্ষায় জমিতে সেচ প্রদান, মৌ বক্স স্থাপন ও হাতের মাধ্যমে পেঁয়াজ ফুলের পরাগায়ন নিশ্চিত করেন বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, জীবিকার্জনের তাগিদে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন আবু তালেব। তবে চাকরির চেয়ে পেঁয়াজের বীজ চাষ লাভজনক। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওই বছরই তার বাবার দেখাদেখি ১৬ শতাংশ (১০ কাঠা) জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে অল্প অল্প করে চাষ শেখা ও স্বপ্ন বুনা। এরপর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এক বিঘা দুই বিঘা করে বাড়তে থাকে তার বীজ চাষ। ২০০৩ সালে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে বীজচাষ করে বেশখানেক লাভের মুখ দেখেন। এরপর আর জীবিকার জন্য তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত বছর ১১ বিঘা জমিতে প্রায় ১৮ মণ বীজ উৎপাদন করে প্রায় ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। চলতি মৌসুমে তিনটা প্লটে তিনি ১৯ বিঘা জমিতে সুপার কিং, লালতীর কিং ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। আলাপকালে আবু তালেব জানান, বাবার কাছ থেকে তিনি পেঁয়াজের বীজচাষে উদ্বুদ্ধ হন। কিন্তু পরিবারের চাপে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি পুরোদমে বীজ চাষাবাদ শুরু করেন। উৎপাদন বৃদ্ধি ও বীজের গুনগত মান রক্ষায় জমিতে সেচ প্রদান, মৌ বক্স স্থাপন এবং হাতের সাহায্যে পেঁয়াজ ফুলের পরাগায়ন নিশ্চিত করেন তিনি। চলতি বছরে তিনি অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ১৯ বিঘা জমিতে এ চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বিঘায় গড়ে দুই মণ করে ১৯ বিঘায় প্রায় ৩৮-৪০ মণ ফলনের প্রত্যাশা তার। প্রতিকেজি বীজ আড়াই হাজার টাকা দরে প্রায় ৩৮ লাখ থেকে ৪০ টাকা বীজ বিক্রি সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী। এতে খরচ বাদে মাত্র পাঁচ মাসে তার প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা মুনাফা হবে।

স্থানীয় কৃষক করিম মন্ডল জানান, আবু তালেব তার জমি ইজারা নিয়ে বীজ চাষাবাদ করেছে। গাছ ও ফুল ভালো হয়েছে। ভালো ফলন হবে। আগামী বছর দেড়-দুই বিঘা জমিতে তিনিও এমন চাষাবাদ করবেন।

ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আবু তালেব বলে জানিয়েছেন কুমারখালি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ১৯ হেক্টর জমিতে বীজের চাষাবাদ হয়েছে। কৃষকদের বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ করা হয়েছে। বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত