ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুন্দরবনে গুলিশাখালীতে নতুন করে আগুন

টেপারবিলের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সুন্দরবনে গুলিশাখালীতে নতুন করে আগুন

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজির টেপারবিলে আগুন পুরোপুরি না নিভতেই সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে গুলিশাখালী বন টহল ফাঁড়ির বড় এলাকাজুড়ে নতুন করে আগুন লেগেছে। জ্বলছে দাউ দাউ করে। গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে সংবাদকর্মীরা কলমতেজি ড্রোন উড়িয়ে এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুলিশাখালীতে নতুন করে বড় এলাকাজুড়ে আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখতে পায়। নতুন এলাকায় আগুনের বিষয়টি জানতে পেরে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত সেখানে গিয়ে বড় এলাকাজুড়ে আগুন জ্বলতে দেখে। পরে তারা নালা কেটে (ফায়ার লেন) আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ এই বনের চার কিলোমিটর অভ্যন্তরে নতুন করে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অগ্নিকাণ্ড এলাকায় নালা কাটা (লাইন অব ফায়ার) শুরু করা হয়েছে। যাতে বনের ব্যাপক এলাকায় আগুন ছড়াতে না পারে। গুলিশাখালী এলাকায় নতুন করে আগুন লাগা এলাকার বেশ খানিকটা দূরে পানির উৎস এ কারণে আগুন নির্বাপণে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ ফায়ার লাইন কাটা ও বন বিভাগসহ ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপলাইন টানার পরই গুলিশাখালীতে বনে নতুন করে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হবে। এর আগে গত শনিবার সকাল ৭টার দিকে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দবন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি টহল ফাঁড়ির টেপারবিল এলাকায় লাগা আগুন গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত পুরোপুরি নেভেনি। বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া ইউনিটের সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয়দের প্রচেষ্টার পর আগুন ৯৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। টেপারবিলে আগুনে চার একর বনভূমির গাছপালা পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ। এদিকে, টেপারবিলে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ৪ মে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার লতিফের ছিলা এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে বন বিভাগের তদন্ত রির্পোটে বনভূমির ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫০ টাকার ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই যুগে ২৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।

চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) দ্বিপন চন্দ্র দাস জানান, কলমতেজির টেপারবিলে আগুন পুরোপুরি নেভেনি। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলছে, গাছের পাতা পড়ে পচে সুন্দরবনের মাটির নিচে মিথেন গ্যাস থাকার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও মাটির নিচে গাছের মরা শিকড় বেয়ে ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে ফের আগুন জ্বলে উঠতে পারে। সে কারণে আরো কয়েকদিন অগ্নিকাণ্ডের স্থানটি বন বিভাগের লোকজন থাকবে। গুলিশাখালী ফাঁড়ির এলাকায় রোববার সকালে নতুন করে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে নালা কাটা (লইন অব ফায়ার) শুরু করা হয়েছে। এলাকায়ও কাছাকাছি পানির কোনো উৎস নেই। গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ ফায়ার লাইন কাটা ও বন বিভাগসহ ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপলাইন টানার পরই গুলিশাখালীতে বনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হবে। এই কর্মকতা আরো বলেন, সুন্দবনের বিলের মাছ শিকার ও গরু চরাতে পথ তৈরি করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানোর পাশাপাশি জেলে-বনজীবীদের সিগারেট ও মৌয়ালদের লোপা থেকেও আগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম জানান, সুন্দরবনের টেপারবিলে লাগা আগুন ৯০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে গুলিশাখালী টহল ফাঁড়ির এলাকায় নতুন করে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত