ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সেবার স্বপ্নপূরণ

চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সেবার স্বপ্নপূরণ

দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে ফেরি চলাচল শুরু হলো চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেরার বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এই ফেরি সেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। চার লাখ মানুষের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হলো এ ফেরি সেবার মধ্যে দিয়ে। সাগরবক্ষের এই দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সরাসরি যোগাযোগের স্বপ্ন পূরণ হল।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া পর্যন্ত চলাচল করবে এই ফেরি সেবা। সোমবার সকাল ৯টায় প্রথমবারের মত ফেরি যাত্রা করে সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে। এ উপলক্ষে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এই ফেরিসেবা চালু করতে দুই প্রান্তে নতুন সড়ক, পার্কিং ও ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে হয়েছে পরীক্ষামূলক চলাচল। এর আগে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও এ পথে ফেরি চালু করা যায়নি। উত্তাল এই সাগর পথে স্পিডবোট ও ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযানে চলাচল করতে হয় দ্বীপের বাসিন্দাদের। বিরূপ পরিবেশে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে।

এছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। সাগর পাড়ি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মানুষদের মূল ভূখণ্ডে আনাও সম্ভব হয় না। তাছাড়া জোয়ার ভাটার কারণে বেশিরভাগ সময় নৌযান থেকে নেমে কাদা পেরিয়ে ঘাটে পৌঁছাতে হয় সন্দ্বীপবাসীকে। এখন চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে সরাসরি এই ফেরি সেবা চালুর মধ্য দিয়ে সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণ হলো।

বাস, ট্রাক, ট্যাংক লরি, মিনিবাস, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন সরাসরি দ্বীপে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সন্দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ারও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগরে ফেরি চলাচল সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা আছে। সেজন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। বিআইডব্লিউটিএ এর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে যেতে বা সেখান থেকে আসতে একবারে এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মত সময় লাগছে। জোয়ার-ভাটা হিসেব করে প্রতিদিন যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট চারবার ফেরি চলাচলের কথা আছে।’

কামরুজ্জামান বলেন, ফেরিতে একবারে ছোট বড় মিলিয়ে ৩৫টির মতো যানবাহন পরিবহন করা যাবে। ইম্প্রুভড মিডিয়াম টাইপ ফেরি ‘কপোতাক্ষ’র মাস্টার সামশুল আলম সাইফুল বলেন, ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি ৬০০ জন মানুষ চলাচল করতে পারবে। সন্দ্বীপ চ্যানেলে কিছু স্থায়ী জাল পাতা থাকে। রাতে চলাচল নিরাপদ করতে সেগুলো সরানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সেগুলো অপসারণ করা হবে। ফেরি চালু উপলক্ষে সোমবার থেকে ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলও উদ্বোধন করেন উপদেষ্টারা।

এছাড়া গতকাল থেকে চট্টগ্রামের এয়ারপোর্ট- সি বিচণ্ড নিমতলা-নয়াবাজার-কুমিরা-বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট-সন্দ্বীপ এনাম নাহার মোড় রুটেও এসিবাস সেবা চালু করেছে বিআরটিসি। ফেরিতে চলাচলের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে- সাধারণ যাত্রী ১০০ টাকা, মোটরসাইকেল ২০০ টাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৫০০ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ৯০০টাকা, বাস ৩ হাজার ৩০০ টাকা, ট্রাক ৩ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ১০ চাকার গাড়ি ৭ হাজার ১০০ টাকা। সন্দ্বীপের সন্তান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান বলেন, ‘সন্দ্বীপ এখন জাতীয় যোগাযোগব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হলো। এতে করে দ্বীপ উপজেলার উন্নয়ন সহজ হওয়ার সাথে সাথে জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত