ফের রওশন-মামুনকে জাপা চেয়ারম্যান-মহাসচিব দাবি করে আবেদন ইসিতে। শুধু দিনাজপুর-৫ আসনে ভোট করতে একজন আওয়ামী লীগ নামে নিবন্ধন চেয়ে আবেদন ও নতুন দল এনসিপি’র সংক্ষিপ্ত নাম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিসিপি নামে একটি দল।
সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির রওশনপন্থিরা আবার দলের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশিদ নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। মঙ্গলবার দলটির মহাসচিব এ সংক্রান্ত আবেদন করেছে।
এরইমধ্যে দিনাজপুরের উজ্জল রায় আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি দল গঠনের পাশাপাশি নৌকা বা ইলিশ প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে। অন্যদিকে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির সংক্ষিপ্ত নাম ‘এনসিপি’ নিয়ে ইসিতে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি-বিসিপি। তিনটি আবেদন ও চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়নি। এটি আইনগতভবে কতটা যৌক্তিক গ্রহণযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য নয় তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
রওশনপন্থি জাপা কী চায় : নির্বাচন কমিশনের রেকর্ডে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নং-১২ জাতীয় পার্টির অনুকূলে চেয়ারম্যান হিসেবে বেগম রওশন এরশাদ ও মহাসচিব হিসেবে কাজী মো. মামুনুর রশিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানানো হয়েছে। বর্তমানে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাপা নিবন্ধিত হিসেবে রয়েছে নির্বাচন কমিশনে। এর চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক।
গত বছর জাপার মতবিরোধের মধ্যে সম্মেলন করে আলাদা কমিটি ঘোষণা করে রওশনপন্থিরা। পরে কমিশনে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করলেও তা নাকচ করে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাপার হাতে থাকে লাঙ্গল।
কাজী মামুন এক চিঠিতে জানান, ২০২৪ সালের পাতানো নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এই সব প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি যখন বিলুপ্ত প্রায়- তখন পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পার্টির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বেগম রওশন এরশাদ- জাতীয় পার্টির বর্ধিতসভা আহ্বান করেন। ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পার্টির বর্ধিতসভায় সর্বসম্মতভাবে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে সাংগঠনিক নিয়মে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এই বর্ধিত সভায় ৯ মার্চ-২০২৪ তারিখে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সম্মেলনে বেগম রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদ কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান এবং আমি কাজী মো: মামুনুর রশীদ মহাসচিব নির্বাচিত হই। এছাড়াও পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যবৃন্দ নির্বাচিত হন। জানা যায়, কাউন্সিল শেষে জাপার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে- নির্বাচন কমিশনের রেকর্ডে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বেগম রওশন এরশাদ এবং মহাসচিব হিসেবে কাজী মো: মামুনুর রশীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করা হয়। ...বিগত সরকারের একান্ত আজ্ঞাবহ জাতীয় পার্টির একটি অংশকে তাদের গৃহপালিত বিরোধীদল হিসেবে সংসদে রাখার জন্য আমাদের বৈধ কাউন্সিলে নির্বাচিত কমিটিকে নির্বাচন কমিশন অনুমোদন না দিয়ে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে আমাদের আবেদন নামঞ্জুর করে দেন। দিনাজপুরে ফিজারের আসনে ভোট করতে ‘আওয়ামী লীগ’ নামে নিবন্ধন চায় উজ্জল রায় : ‘আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি দল গঠন করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আবেদন করেছে উজ্জল রায়। নৌকাণ্ডইলিশ প্রতীক চেয়ে নতুন দলটি একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের শর্তপূরণ করে নিবন্ধন আবেদন করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নৌকা প্রতীকে একটি দল নিবন্ধিত রয়েছে।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া আবেদনে উজ্জল রায় জানান, গতকাল ২৪ মার্চ আওয়ামী লীগ দলটি গঠন করা হয়। দলের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। প্রতীক হিসেবে নৌকা বা ইলিশ দাবি চেয়েছেন, তিনি নিজেকে সভাপতি পদে আসীন হিসেবে আবেদন উল্লেখ করেছেন। নতুন দল নিবন্ধন আবেদনের জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় রয়েছে। উজ্জল রায়ের বাড়ি দিনাজপুর জেলার পারবর্তীপুর উপজেলায়, পিতার নাম নরেশ চন্দ্র রায়, মাতার নাম পারুল রায়।
উজ্জল রায় বলেন, ফুলবাড়ী-পারবর্তীপুর নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৫ আসনে আমি ভোট করতে চাই। সম্মেলনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চেয়েছি। তখন দেখা করতে পারিনি। আমি ওই আসনে নির্বাচন করতে চাই। আমার দলেই এখন পর্যন্ত আমিই একজন। আওয়ামী লীগ নামে নিবন্ধন আবেদন করেছি।
নিবন্ধনের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানকে (ফিজার) সপ্তম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমি এখানে নির্বাচন করতে চাই। এজন্য ইসিতে আবেদন করেছি। সারাদেশে কমিটি করতে গেলে যে টাকা দরকার তা আমার নেই। এজন্য আমিই একাই কাজ করব বলেন উজ্জল রায়।
আওয়ামী লীগের নতুন দলের নিবন্ধন আবেদনের বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য যে আইন এবং বিধি আছে, তা পর্যবেক্ষণ করে সমস্ত শর্ত যদি পূরণ করে তাহলে তাকে নিবন্ধন দিয়ে থাকি। শর্ত যদি পূরণ করতে না পারে তাহলে আমরা তাকে গ্রহণ করতে পারব না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নাম নিয়ে ইসিতে আপত্তি বিসিপি’র : জাতীয় নাগরিক পার্টির সংক্ষিপ্ত নাম ‘এনসিপি’ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি-বিসিপি।
বিসিপি মহাসচিব শাহরিয়ার খান আবির খান ইসি সচিবের কাছে আবেদনে জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নামক একটি নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে! সম্প্রতি পত্রপত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র সংক্ষিপ্ত নাম নিয়ে বহু আলোচনা চলছে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি’র সংক্ষিপ্ত নাম হওয়া উচিত ‘জেএনপি’; কিন্তু দেয়া হয়েছে ‘এনসিপি’ যেটি সঠিক নয়। কারণ নাম যে ভাষায় লেখা হোক না কেন, এর কোনো পরিবর্তন হয় না।এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, আমরা আইন এবং বিধি মোতাবেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।