ঘুম মানে শুধু বিশ্রাম নয়, এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালে আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন এবং স্লিপ রিসার্চ সোসাইটি অতীতের কয়েক হাজার গবেষণা প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে বিভিন্ন বয়সী মানুষের পর্যাপ্ত ঘুমের সময়সীমার একটি প্রস্তাব তুলে ধরে। সেখান থেকে জানা যায়, ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা এবং ২৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে বলা হয়েছে। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। পর্যাপ্ত ঘুমের উল্লেখযোগ্য উপকারিতাগুলো আলোচনা করা হলো:
শারীরিক সুস্থতা : ঘুম মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়। পর্যাপ্ত ঘুমালে হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে, পরিপাক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, পেশি মেরামত ও বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি : স্মৃতিশক্তির উন্নতি, শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সৃজনশীলতা বাড়াতে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুমালে মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়ে, তথ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি : পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা বৃদ্ধি পেতে পারে। ভালো ঘুম আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে, আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুম অনিয়মিত, তাদের ঠান্ডা-সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যেসব ক্ষতি হয় : পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ সংক্রান্ত কিছু সাধারণ সমস্যার মধ্যে রয়েছে স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া, ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত অনুভূতি, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ও হরমোনজনিত সমস্যা, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া এবং সৃষ্টিশীলতা হ্রাস।
ভালো ঘুমের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস : পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম নিশ্চিতে কিছু কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে : নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মেনে চলুন : প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং জেগে উঠলে দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সুসংগঠিত করে। আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন: ঘর অন্ধকার, শান্ত ও শীতল রাখুন। আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করুন।