মহাবিশ্বের ‘শিশুকালের’ সবচেয়ে স্পষ্ট ও বিস্তারিত ছবি প্রকাশ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, এ সময় মহাবিশ্বের বয়স ছিল শুধু ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর। ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে অর্থাৎ বিগ ব্যাংয়ের কিছু সময় পরপরই মহাবিশ্ব দেখতে কেমন ছিল তার ঝলক মিলেছে এসব বিস্ময়কর ছবিতে। চিলির আন্দিজ পর্বতমালার উঁচুতে অবস্থিত আতাকামা কসমোলজি টেলিস্কোপ বা এসিটি থেকে এসব ছবি নেয়ার কথা প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। এসব ছবির জন্য ‘মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড’ বা সিএমবি নামে পরিচিত আলো ধারণ ও তা নিয়ে গবেষণার জন্য একসঙ্গে কাজ করেছেন ‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা দল’সহ গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। এই প্রাচীন আলো কোটি কোটি বছর ধরে মহাকাশে ভ্রমণ করে আসছে এবং এটিই গবেষকদের আদি মহাবিশ্বের ছবি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্বের প্রাচীন আলোর উজ্জ্বলতা ও দিক বা মেরুকরণ দুটোরই বিস্ময়কর বিস্তারিত উঠে এসেছে এসব নতুন ছবিতে। ফলে কীভাবে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মেঘ তৈরি হতে শুরু করেছে তার দেখা মিলেছে। এসব মেঘই পরবর্তী সময়ে প্রথম তারা ও ছায়াপথে পরিণত হয়েছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। এই আলো গবেষণা করে তারা বলছেন, মহাবিশ্ব কীভাবে কাজ করে তার ব্যাখ্যা দেওয়া বর্তমান মডেলটি এখনও সঠিক। তাদের গবেষণা এমন বিভিন্ন ধারণাকেও বাতিল করতে সাহায্য করেছে, যা এসব ছবির তথ্যের সঙ্গে মেলে না। ‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক এরমিনিয়া ক্যালাব্রেস বলেছেন, নতুন এসব ছবি আমাদের পৃথিবীসহ মহাবিশ্বের জটিল বিভিন্ন কাঠামো কীভাবে তৈরি হয়েছে তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেছেন, পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব প্রতিটি দিকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি আলোকবর্ষজুড়ে বিস্তৃত ও এতে প্রচুর পরিমাণে ভর রয়েছে, যা প্রায় ১ হাজার ৯০০ জেটা-সূর্য অর্থাৎ প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সূর্যের সমান। এ ভরের শুধু ক্ষুদ্র একটি অংশ বা ১০০ জেটা-সূর্য আমরা যে ধরনের পদার্থ দেখতে পাই সেই ধরনের সাধারণ পদার্থ দিয়ে তৈরি, যার বেশিরভাগিই রয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। প্রাণ তৈরির উপাদান যেমন- কার্বন, অক্সিজেন ও আয়রনের অনেক পরে এসেছে। এগুলো মূলত তারার মধ্যে তৈরি হয়েছে। বাকি ভর এখনও অদৃশ্য ও রহস্যময় অন্ধকারে রয়ে গেছে।
মহাবিশ্ব বর্তমানে কত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে তা নিয়ে মতবিরোধ দীর্ঘদিনের, এটিই সমাধান করতে চেয়েছে গবেষণা দলটি। কিছু পরিমাপ বলছে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় প্রতি মেগাপারসেক ৬৭ থেকে ৬৮ কিলোমিটার সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। এর মানে হচ্ছে দুটি গ্যালাক্সি বা যে কোনো মহাজাগতিক বস্তু যারা প্ররস্পরের কাছ থেকে দিন লাখ ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে আছে, তারা পরস্পরের কাছ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৬৭ বা ৬৮ কিলোমিটার গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে। আবার অনেকের ধারণা, এই গতি প্রতি সেকেন্ডে ৭৩ থেকে ৬৭ কিলোমিটার। নতুন গবেষণাটি কম সংখ্যাকে সমর্থন করেছে এবং আগের চেয়ে আরও নির্ভুলতার সঙ্গে হিসাবটি করেছেন গবেষকরা। শুধু সামান্য ত্রুটির ব্যবধানে মহাবিশ্বের বয়স ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা।