ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ পৌর এলাকার চিত্রা পাড়ের হেলাই গ্রামের ৫ শতাধিক নারী ব্যাগ তৈরির কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। ঘর গৃহস্থলীর কাজ শেষে অবসর সময়ে বস্তা থেকে শপিং ও টিস্যু ব্যাগ তৈরি করে গৃহিণীরা প্রতিদিন যা আয় করছেন তা তাদের সংসারের কাজে লাগছে। এতে করে স্বচ্ছতা ফিরছে ওইসব নারীর সংসারে। একসঙ্গে একই গ্রামের ৫ শতাধিক নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প কেবল উপজেলার হেলাই গ্রামেরই। যে কারণে আশপাশে সবার নিকট গ্রামটি ব্যাগের গ্রাম হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও আগ্রহ থেকে কঠোর পরিশ্রম করে গ্রামের এসব নারী নিজেদের করেছেন আত্মনির্ভশীল এবং স্বাবলম্বী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেলাই গ্রামে বস্তা, টিস্যু এবং নন ওভেনের শপিং ব্যাগ তৈরি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে নন ওভেন শপিং ব্যাগ তৈরিতে প্রায় ৫০ জন নারী শ্রমিক কাজ করলেও অধিকাংশ নারী কাজ করছেন বস্তার ব্যাগ তৈরিতে। লবণ, সার এবং বিভিন্ন ওষুধের বস্তা কেটে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ। মূলত ছোট মাঝারি এবং বড় এই তিন ধরনের ব্যাগ নারীরা তৈরি করে থাকেন। সেলাই মেশিন, মোটর লাগানো মেশিন এবং হাতের সাহায্যে তৈরি করা হয় এসব ব্যাগ। ধরন অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ টাকা মূল্যে প্রতিটি বস্তা কিনে তা থেকে দুটি করে প্যাকেট বা ব্যাগ তৈরি করা সম্ভব হয়। এসব নারীদের তৈরিকৃত ছোট ব্যাগ ৩ টাকা, মাঝারি ব্যাগ ৫ টাকা এবং বড় ব্যাগ ১০ টাকা মূল্যে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়। এই গ্রামেই ছোট বড় মিলে ব্যাগ ব্যবসায়ী আছে প্রায় শতাধিক। তারা বাইরে থেকে ট্রাক ভর্তি বস্তা কিনে তা পানিতে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে এরপর ব্যাগ তৈরির নারী শ্রমিকদের নিকট প্রদান করেন নির্দিষ্ট মজুরির বিনিময়ে।
এরকম একজন নারী ব্যাগ ব্যবসায়ী হলেন আক্তার হোসেনের স্ত্রী রোকসানা বেগম। তিনি আগে নিজেই ব্যাগ তৈরির কাজ করতেন। গত দুই বছর হলো রোকসানা মাত্র ২,৪০০ টাকা দিয়ে ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
তিনি জানান, ঘরে বসে না থেকে অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেছিলাম ব্যবসা। এখন আমার ৫০ হাজার টাকা পুঁজি এসে দাঁড়িয়েছে। খরচ খরচা বাদে মাসে আমার প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। আমার মত গ্রামের অনেকেই এ কাজ করছেন। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা পেলে ব্যবসাটাকে আরো বড় করতে পারতেন বলেও তিনি যোগ করেন। রোকসানা বেগমের নিকট থেকে বস্তা নিয়ে ব্যাগ তৈরির কাজ করেন একই গ্রামের জহুরা বেগম। তিনিও একজন গৃহিণী। সংসারের কাজ সেরে তিনি প্রতিদিন ২০-২৫ ডজন ব্যাগ তৈরি করেন। এতে করে প্রতিদিন ১৭০-২০০ টাকা হারে মাসে প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা আয় করেন তিনিও। পরিশ্রম করে আয় করতে পেরে খুশি জহুরা বেগম। হেলাই গ্রামের সব থেকে বড় বস্তা ব্যবসায়ী মোকলেস হোসেন বলেন, প্রতি সপ্তাহে আমি ৫-৭ ট্রাক মাল কিনি। সব গ্রামেই বিক্রি হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গ্রামে অধিকাংশ বাড়িতেই বিশেষ করে নারীরা বস্তার ব্যাগ তৈরির কাজ করেন। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা তাদের কাজে এবং ব্যাগ বিক্রিতে সহায়তা করে থাকেন। বাজারে ব্যাগের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে হেলাই গ্রামের তৈরি হাত ব্যাগ চলে যাচ্ছে আশপাশের জেলা এবং উপজেলার ছোট বড় শহরে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম বলেন, এক গ্রামে একসঙ্গে ৫ শতাধিক নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্পটা সত্যিই প্রশংসনীয়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের কোনোভাবে সহায়তা প্রদান করা যায় কি না সে ব্যাপারে সদয় দৃষ্টি দেব। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, হেলাই গ্রামে স্বাবলম্বী নারীদের আমি সম্মান জানাচ্ছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংগ্রামী এসব নারীদের জন্য কিছু করার থাকলে অবশ্যই তা করব।