সুসংবাদ প্রতিদিন

মাশরুমের চপ বিক্রি করে স্বাবলম্বী

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এইচএম ইমরান, ঝিনাইদহ

মাশরুমের চপ খেয়ে ভালোলাগায় নিজের দোকানে এই চপ তৈরি করে তা বিক্রির প্রবল ইচ্ছা জাগে আশরাফুলের মনে। যেই ভাবনা সেই কাজ। ৭ বছর আগে এলাকার একজন নারী মাশরুম চাষির নিকট থেকে কাঁচা মাশরুম কিনে তা দিয়ে চপ তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন দোকানে। চপ প্রেমিদের ভালো সাড়াও মেলে তখন। এবার মাথায় চিন্তা এলো মাশরুম কিনে নয়; নিজে উৎপাদন করে সেই মাশরুমের চপ বিক্রি করব। সে চিন্তা থেকেই ছুটে গেলেন প্রথমে এলাকার ওই নারী মাশরুম চাষির নিকট। কিন্তু মাশরুম চাষের ব্যাপারে তার কাছ থেকে আশানরূপ সহযোগিতা না পাওয়ায় যোগাযোগ করলেন যশোর মাশরুম সেন্টারে। সেখান থেকেই মূলত মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে শুরু করলেন মাশরুম চাষ। দুইটি ঘরে চারটি কাঠের তাকে ওয়েস্টার জাতের মাশরুমের স্পনগুলো থাকে থাকে সাজিয়ে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করলেন। মাসখানেকের মধ্যেই ফলন আসতে শুরু করে। এদিকে চাপরাইল বাজারে অবস্থিত তার দোকানের নামকরণ করলেন ‘মাশরুম চপ হাউস’। ৩০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ‘মায়ের দোয়া মাশরুম সেন্টার’ নামে ১৫০০ স্পন দিয়ে প্রথম শুরু। নিজের চাষকৃত ২০ থেকে ২৫ কেজি কাঁচা মাশরুম প্রতি মাসে দোকানে এনে তা দিয়ে চপ বানান তিনি। মাশরুমের তিন ধরনের চপ প্রতিটি যথাক্রমে ১০, ২০ ও ৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন ক্রেতাদের নিকট। এভাবে প্রতিদিন দোকানে নিজ হাতে আলু ও মাংসের চপের পাশাপাশি মাশরুমের তৈরি চপ বিক্রি করে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা মাসে আয় করেন। কালীগঞ্জ উপজেলার অনুপমপুর গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম মাশরুম চপ হাউস নামের দোকান দিয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত একজন মাশরুম উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। তার সাফল্য দেখে আশপাশের অনেকেই মাশরুম চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন, নিচ্ছেন তার নিকট থেকে পরামর্শ। মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে ওঠা এই তরুণ লেখাপড়ার গণ্ডি বেশি দূর পেরতে পারেননি। বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন এই খাবারটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্বপ্নবাজ এই তরুণ মাশরুম উদ্যোক্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, মাশরুম চাষ বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষি অফিস মাশরুম চাষের উপর প্রশিক্ষণ, বীজ ও উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে। আমিও তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেই। প্রথম স্পন প্যাকেট থেকে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। ২ কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে প্রায় ২ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কাঁচা মাশরুম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও শুকনো মাশরুম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। বাজারে মাশরুমের বেশ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অনেকেই মাশরুম বিক্রির জায়গা বা স্থান সঠিকভাবে নির্বাচন করতে না পারায় উৎপাদিত মাশরুম ঠিকমতো বিক্রি করতে পারেন না বলে তিনি জানান। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলায় মাত্র ১৮ জন বেকার যুবক ও নারী উদ্যোক্তা মাশরুম চাষ করছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন নারী রয়েছেন। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে কৃষি অফিস এইসব মাশরুম চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। প্রশিক্ষণ নেয়া প্রত্যেকে বেকার যুবক এবং নারীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কাঠের তৈরি তাক, পানির পাত্র এবং ওয়েস্টার জাতের ১০০টি স্পনও প্রদান করা হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবারের পাশাপাশি মাশরুম চাষ অনেক লাভজনক।