ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বনশ্রীতে নারী সাংবাদিককে হেনস্তা

গ্রেপ্তার তিন
বনশ্রীতে নারী সাংবাদিককে হেনস্তা

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় এক নারী সাংবাদিককে যৌন হয়রানি, হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানসহ (২৫) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

গতকাল বৃহস্পতিবার র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সনদ বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন, প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশান, মো. রাইসুল ইসলাম, মো. কাউসার হোসেন।

সনদ বড়ুয়া বলেন, গত বুধবার রাতে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় যৌন হয়রানি সংক্রান্ত একটি ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে তা ব্যাপকভাবে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরীর রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় উল্লিখিত এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাতনামা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর রামপুরা থানার মেরাদিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর রমনা থানার বেইলি রোড এলাকা থেকে মো. রাইসুল ইসলামকে এবং শ্যামপুর থানার গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে মো. কাউসার হোসেনকে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের রামপুরা থানায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত বুধবার রাত ৮টার দিকে বনশ্রীর ই-ব্লকের তিন নম্বর সড়কের একটি জুসের দোকানের সামনে এক নারী সাংবাদিককে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে। এসময় নারী সাংবাদিক ও তার ছোট ভাই রিশাদকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রামপুরা থানায় সোয়েব রহমান জিসানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিক জানান, ছোট ভাই রিশাদকে নিয়ে বনশ্রী ই-ব্লকের তিন নম্বর রোডের মুখে একটি জুসের দোকানে ছিলাম। এসময় কয়েকজন স্থানীয় যুবক আমাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। আমার ভাই প্রতিবাদ করলে তারা প্রথমে তাকে মারধর করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও শ্লীলতাহানি করে এবং কিল-ঘুষি মারে।

তিনি বলেন, আমরা নিজেদের বাসার সামনেই নিরাপদ নই। ছেলেগুলো এমনভাবে আচরণ করছিল যেন তারা যা করছে, সেটাই তাদের অধিকার। আমার ভাই যখন প্রতিবাদ করল, তখন তারা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এমনকি তারা আমাকে হেনস্তা করার পরও অকপটে বলে, হ্যাঁ, আমরা রেপ করেছি, কী করবে? পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিক নিজের ফেসবুকে অভিযুক্তদের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে তিনি লিখেন, নিজের বাসার সামনে নিরাপদ না? আমাকে এক দোকানের (বনশ্রী- ই ব্লক ৩নং রোডের ষেশে, ফরাজী এভিনিউ) ভেতর থেকে টিজ করে পাশে এসে দাঁড়ানোয় আমার ভাই ছেলেগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। আমাকে টিজ করা তাদের অধিকার ধরনের ভাব নিয়ে উল্টা আমার ভাইকেই বলতে থাকে ওদের সামনে এসে কেন দাঁড়াল, কেন তাকাচ্ছে। আমার ভাই বলল, আমার বোনকে উত্যক্ত করল দাঁড়াইয়া দেখব না কি, এরপর আমার ভাইকে বাড়ি কই বাড়ি যাই বলে এগ্রেসিভ অঙ্গভঙ্গি শুরু করে, সম্ভবত এলাকার মাস্তানদের পালিত মাস্তান এরা। এরপর আমার ভাইকে মারা শুরু করে, আমি ওদের টান দিয়ে আমার ভাইকে উঠাইতে যাই, এরমধ্যে সবুজ জামা পরা ছেলেটা এসে পেছন থেকে আমার চুল টান দিয়ে বুকে হাত দিয়ে হ্যাচকা টান দেয়, কালো গেঞ্জির ছেলেটা লাথি দেয়, এরপর আমি যা হয় কাঁদতে কাঁদতে চিল্লাতে থাকি সবাই দেখতেছেন কীভাবে আমার গায়ে বারবার হাত দিচ্ছে। এর মধ্যে সবুজ গেঞ্জির ছেলে এসে বলে আমি সাংবাদিক কাকে ডাকবি কোন পুলিশ ডাকবি ডাক, আমার নাম বল। আমার সঙ্গে থাকা মাশফিক ব্যস্ত ছিল আমাকে ধরে রাখতেই, এরমধ্যে ও বলে আপনি কোথাকার সাংবাদিক, আমি ডেইলি স্টারের, ওকেও লাথি দেয় ছেলেটা। আমার গায়ে ব্যথা। তবে আমার ভাইয়েরটা জানি না, বোনকে বাঁচাতে গিয়ে আমাদেরই বাসার সামনের গলিতে এসব দুই টাকার মাস্তানদের ইচ্ছামতো মার খেল। সবার দাঁড়াইয়া থাকা দেখে পালটা দুয়েকটা আমিও দেই, আফসোস বেশি দিতে পারিনি। আমি যখন কাঁদতে কাঁদতে চিল্লাতে চিল্লাতে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যাচ্ছিল, এই ছেলে দুইটা বারবার মুখ কুচকে বলেই যাচ্ছিল, ‘হ রেপ করছি আমরা’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত