ওপেনএআই উদ্ভাবিত আলোচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের ফলে পরিবেশে খারাপ প্রভাব পড়ছে। সাধারণ ঘরে যে বিদ্যুৎ লাগে তার ১৭ হাজার গুণ বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় চ্যাটজিপিটির পেছনে। প্রতিদিন অসংখ্য ইউজারদের উত্তর দিতে হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে। এআই টুলের বিদ্যুৎ খরচ শুনে এমনটাই মন্তব্য করছেন অনেকে। আর তার জন্য ইউনিট ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করে বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেয়া এই প্রযুক্তি। যত দিন যাচ্ছে, ততই অবাক করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। এআইয়ের জগতে বেশিরভাগ মানুষের যে প্রযুক্তির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটছে তা হল চ্যাটজিপিটি। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন ২০ কোটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় চ্যাটজিপিটিকে। যার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ করে ওপেনএআই।
সম্প্রতি এক রিপোর্টে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। এক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিন ৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ করে চ্যাটজিপিটি। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ ঘরের তুলনায় ১৭ হাজার গুণ বেশি। ব্যবহার যত বাড়বে, তত বিদ্যুৎ খরচ আকাশ ছোঁবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত, এই ধরনের টুলকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য দরকার পড়ে কয়েক লাখ ডেটা।
সেই সব ডেটা সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ করে চ্যাটজিপিটির মতো টুলগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আর গোটা প্রক্রিয়া সফল করার জন্য মূল শক্তি আসে বিদ্যুৎ থেকে। তাই পরিবেশবিদরা মনে করছেন, চ্যাটজিপিটির ফলে বায়ুমণ্ডলে খারাপ প্রভাব পড়ছে। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন বহু বিজ্ঞানী ও গবেষক। ডেটা বিজ্ঞানী অ্যালেক্স ডি ভ্রিসের অনুমান, গুগল যদি প্রতিটি সার্চের জন্য জেনারেটিভ এআই ব্যবহার শুরু করে তাহলে বছরে প্রায় ২৯ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ হবে। যা কেনিয়া, গুয়াতেমালা এবং ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশের বার্ষিক বিদ্যুৎ খরচকেও ছাপিয়ে যাবে।
যদিও এটা ভবিষ্যৎ নয় বরং বর্তমানে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে প্রতিটি এআই সার্ভার যে পরিমাণ শক্তি খরচ করছে তা যুক্তরাজ্যে এক ডজন পরিবারের মিলিত শক্তির থেকেও বেশি। যদিও তিনি বলেন, সামগ্রিক বিদ্যুৎ খরচ গণনা করা শক্ত। কারণ এআই মডেলগুলির পরিচালনা পরিবর্তনশীল এবং বড় বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। চিপ প্রস্তুতকারী সংস্থা এনভিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ২০২৭ সালের মধ্যে গোটা এআই সেক্টরে ৮৫ থেকে ১৩৪ টেরাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে।
বর্তমানে স্যামসাং প্রায় ২৩ টেরাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ করে। গুগল এবং মাইক্রোসফট তাদের ডেটা নেটওয়ার্ক এবং সার্ভার পরিচালনার জন্য প্রায় ১০ থেকে ১২ টেরাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ করে। পরিবেশগত যে প্রভাব পড়ছে এর ফলে তা রুখতে হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীর। কারণ ভবিষ্যতে এআই ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়তে চলেছে। আরও শক্তিশালী এবং দক্ষ প্রযুক্তি আসতে পারে। এখনই যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পড়তে পারে একাধিক দেশ।