বিরল এক তারা যুগলের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা যারা এক সময়ে বিস্ফোরিত হবে। ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়্যারউইক’-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন একজোড়া তারার সন্ধান পেয়েছেন, যা ধীরে ধীরে একে অন্যের দিকে সর্পিলভাবে এগিয়ে আসছে ও একদিন এক নাটকীয় মহাজাগতিক ঘটনায় এরা বিস্ফোরিত হবে বলে দাবি তাদের। এ ঘটনাটি আমাদের সৌরজগত থেকে মাত্র দেড়শ আলোকবর্ষ দূরে ঘটছে, যা এ আবিষ্কারটিকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে বিজ্ঞানীদের কাছে। মহাকাশের দিক থেকে বিবেচনায় নিলে এই দূরত্ব তুলনামূলক কম, যা এ ধরনের ঘটনা দেখতে পাওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কাছের ঘটনা বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। এ দুটি তারাই শ্বেত বামন, সূর্যের মতো তারারা যখন নিজেদের জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছায় তখন এরা পেছনে রেখে যায় এমন ঘন অবশিষ্টাংশ, যা শ্বেত বামন হিসেবে পরিচিত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বিশেষ ধরনের বামন জোড়াটি এক ঘনিষ্ঠ কক্ষপথে আবদ্ধ রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত এরা একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষ করবে, যার ফলে তৈরি হবে ‘টাইপ ১ এ’ সুপারনোভা। ‘১ এ’ প্রকৃতির সুপারনোভা হচ্ছে সুপারনোভার এক শক্তিশালী বিস্ফোরণ, যা একটি বাইনারি সিস্টেমে কার্বন-অক্সিজেন শ্বেত বামনের নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের ফলে ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি তৈরি হয় একটি সঙ্গী তারা বা শ্বেত বামনের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে। এ ধরনের বিভিন্ন বিস্ফোরণ বিস্ময়করভাবে উজ্জ্বল হয়ে থাকে এবং মহাবিশ্ব জুড়ে দূরত্ব পরিমাপ করতে ‘স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল’ হিসাবে ১ এ প্রকৃতির সুপারনোভা ব্যবহার করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের অনুমান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাইপ ১ এ সুপারনোভা তৈরি হয় কাছাকাছি কক্ষপথে থাকা দুটি শ্বেত বামন থেকে। যখন এরা একে অন্যের আশপাশে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে তখন ভারী তারাটি এর হালকা সঙ্গী তারা থেকে উপাদান টেনে নেয়। এ সময় খুব বেশি ভর তৈরি হলে তারাটি আর নিজেকে একত্রে ধরে রাখতে পারে না। এর ফলে শক্তিশালী এক বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এখনও পর্যন্ত এত কাছাকাছি এই ধরনের কোনো নিশ্চিত সিস্টেম খুঁজে পায়নি কেউ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন আবিষ্কৃত এ সিস্টেমটির মোট ভর এখন পর্যন্ত একটি শ্বেত বামন জোড়ায় দেখা সর্বোচ্চ, যা সূর্যের ভরের ১.৫৬ গুণ। এমন ভর এটি নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট যে, সিস্টেমটি শেষ পর্যন্ত বিস্ফোরিত হবে। অন্য বিশালাকার সাদা বামনটি প্রায় ০.৮৩ সৌর ভরের, যেখানে অন্যটির ভর প্রায় ০.৭২। আগামী দুই হাজার তিনশ কোটি বছরেও এই বিস্ফোরণ ঘটবে না। তবে ‘বাড়ির এত কাছে’ এমন এক সিস্টেমের সন্ধান পেয়ে বিজ্ঞানীরা রোমাঞ্চিত। বর্তমানে প্রতি ১৪ ঘণ্টায় একে অন্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে দুটি তারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কারণে সর্পিলভাবে এরা আরও কাছাকাছি আসবে। বিস্ফোরণের ঠিক আগে কেবল ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে একে অন্যকে শেষবারের মতো প্রদক্ষিণ করবে এরা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এ ঘটনাটি আমাদের আকাশের অন্য যে কোনো ঘটনার মতো হবে না। এটি পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি উজ্জ্বল ও বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে দুই লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল হবে।
বিস্ফোরণটি একটি বিরল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটবে, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘চতুর্মুখী বিস্ফোরণ’, যেখানে একটি বিস্ফোরণ অন্য বিস্ফোরণের একটি চেইন তৈরি করে, যা বিভিন্ন তারাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। টাইপ ১ এ সুপারনোভা কীভাবে ঘটে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তার এক স্পষ্ট ছবি দিয়েছে এ বিস্ময়কর আবিষ্কার, যা মহাকাশের বড় রহস্য সমাধানের দিকে তাদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।