সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিহিত একটি ছবি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এমনকি নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত শুক্রবার বিকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক শিশুর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিহিত ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মিডিয়া পাড়ায় ছবিটি নিয়ে তোলপাড় চলছে। আলোকিত বাংলাদেশের তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা পারভেজ তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক এস আর পারভেজ নামের আইডিতে শিশুর হাতে হ্যান্ডকাফ পরা ছবিটি প্রথমে পোস্ট দেন। সমালোচনার পর ৮ মিনিট পর তা ডিলেট করে দেন পারভেজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়ার স্টেশন পাড়া এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা পারভেজ আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। একটি সূত্র বলছে, চলতি বছরের ১৮ ফ্রেরুয়ারি চকরিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। বর্তমানে জামিনে আছেন। সোহেল রানা পারভেজ সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের নেতৃত্বে গঠিত ক্যাডার বাহিনীর সক্রিয় একজন সদস্য। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার ও শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে আ.লীগ নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তার ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগ নেতা পারভেজ শিশুর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে সাজানো ছবিটি ছড়িয়ে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। শিশুটির বিস্তারিত পরিচয় না পেলেও ছাত্রলীগ নেতা পারভেজ তার আইডিতে লিখেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমার ভাগিনা ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বি: দ্র: এটা বাস্তবিক নয়, আসামির আদলে অভিনয় করেছে ভাগিনা।’ ছবির বাচ্চাটি একটি বাসার সামনে। বাসার সামনে মহিলা ও পুরুষের জুতা দৃশ্যমান। ছবির পটভূমিতে দেখা যাচ্ছে, এটি কোনো বাসার সামনে তোলা হয়েছে। মেঝেতে সাধারণ চট, স্যান্ডেল-জুতা এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। যা ঘরোয়া পরিবেশ নির্দেশ করে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ এই ধরনের হ্যান্ডকাফ ব্যবহার করে না। তাহলে ঘটনা কী হতে পারে। বাজারে খেলনা হ্যান্ডকাফ এটা। প্রথমত এটি সাজানো কোনো ঘটনা হতে পারে। কেউ ইচ্ছা করে তুলে, সরকারের বিরুদ্ধে চালিয়ে দাও প্রচারণা হতে পারে। কারণ এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদ মাধ্যম এই ছবির সত্যতা বের করতে পারেনি। এভাবে, গুজব ছড়ানোর কাজ শুধুমাত্র নিজের মান-সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস করে না, বরং সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়ক্ষতি ও বিভাজন সৃষ্টির মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গুজব ছড়ানো প্রতিহত করা সবার সামাজিক দায়িত্ব।
অপরাধ তদন্ত বিভাগ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি’র) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ চক্র নানাভাবে মাথাচড়া দিয়ে উঠতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের বেকায়দায় ফেলতে কাজ চালিয়ে আসছে। তার ধারাবাহিকতায় নানা মিথ্যাচার চালিয়ে আসছে। শিশুর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করাটাও এর একটি অংশ। এসব চক্রদের শনাক্ত করতে শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং রাজনৈতিক মহলকে সর্তক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার দেয়া কোনো পোস্ট ডিলিট করেনি তিনি। তাকে বিপদে ফেলতে কেউ তার ছবি এডিট করেছে বলে দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অবগত নয় বলে দাবি করেন।