ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

পান চাষে লাভবান কৃষক

পান চাষে লাভবান কৃষক

পান একটি অর্থকরী ফসল। পানে রয়েছে নানা রকম ভেষজ গুণ। বাঙালির আতিথেয়তায় ওতোপ্রতভাবে জড়িত পান। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ, বিয়ে-শাদীতে পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

উৎপাদন খরচ কম ও বহুবর্ষজীবী হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় পান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার রহিমাবাদ এলাকায় এবার পানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা যায় পানের বরজের নজরকাড়া দৃশ্য। নিরাপত্তাজনিত কারণে পানের বরজগুলো চারিদিক দিয়ে বেড়ায় ঘেরা। জমির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে থাকা পাটকাঠির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পানের গাছ। গাছগুলোতে ঝুলছে সবুজ রঙের মিষ্টি পান। পান চাষের জন্য উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি প্রয়োজন। ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য ভালো। চাষাবাদ পদ্ধতিতে পান চাষে প্রথমে কাটিং সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করতে হয়। এরপর ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে ডাল থেকে সবুজ লতা বের হয়ে ছেয়ে যায় পান পাতার লতা। তারপর শুরু হয় চাষিদের পান সংগ্রহ। এক বিঘা জমিতে পান চাষ করে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে জানান পান চাষিরা। বর্ষাকালে চারা রোপণ করা হলে ৫-৬ মাস পর থেকেই পাতা তোলা শুরু করা যায়। নচিন দিকের পাতা আগে তুলতে হয়। এতটি পাতা সম্পূর্ণভাবে পরিণত হতে ৬-৮ সপ্তাহ সময় দরকার হয়। কচি পাতার চেয়ে বয়স্ক অথচ সবুজ-এমন পাতার চাহিদাই বেশি। বছরে ১০ শতকের একটি বরোজ থেকে গড়ে ৪-৫ লাখ পান পাতা উৎপন্ন হয়। শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ এলাকার রাসেল জানান, কিশোর বয়স থেকেই পানের চাষ করছি। স্বল্প পুঁজিতে পানচাষে দীর্ঘমেয়াদি আয়ের পথ রয়েছে। পাঁচ শতাংশ জমিতে ছয় বছর আগে এককালীন আড়াই লাখ টাকা খরচ করে প্রতিবছর আয় হয় দেড় লাখ টাকা। একই উপজেলার কাটাবাড়িয়া এলাকার আরেক পান চাষি রাজিব বলেন, নতুন বরজে বিঘা প্রতি প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সুন্দরভাবে পরিচর্যা করলে নতুন বরজ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই পান তোলা সম্ভব। এবার পানের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দামও বেশ ভালো। আগের চেয়ে পান চাষ বেশি হচ্ছে। এক একর জমি থেকে প্রতি সপ্তাহে দুইবার করে পান বিক্রি করলে ১৫-১৬ হাজার টাকার বিক্রি করি। পান চাষ করে বছরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। এ এলাকার উৎপাদিত পান যাচ্ছে বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। পাইকারি দরে পান কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন পাইকাররা। কৃষি বিভাগ বলছে, আগ্রহী পান চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাঠকর্মীরা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যার ফলে কৃষকরা পান চাষে সফলতা পাচ্ছেন। যেকোনো সমস্যায় কৃষকরা আমাদের কাছে এলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিচ্ছি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফারহানা আফরোজ জানান, পান চাষ একটি দীর্ঘ মেয়াদি লাভজনক ফসল। অনেক কৃষক পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ কর সংসার চালাচ্ছেন। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে রাসায়নিক সার অনেক কম ব্যবহার হয় ও জৈব সারের ব্যবহার অনেকটাই বেশি। উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আ. বারী জানান, প্রতি বছর উপজেলায় পানের চাষ বাড়ছে। তবে পান চাষিদের পানে পচন, নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের। ফলে প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত