সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জেলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত ও গতকাল শুক্রবার পৃথক সময়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন ১৫ জন।
হবিগঞ্জ : মাধবপুরে ট্রাকের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নিহত চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- বানিয়াচং উপজেলার চমকপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী মোস্তাকিনা আক্তার (৩৫), তার দেবরের স্ত্রী একই গ্রামের জহুর আলীর মেয়ে আয়েশা বেগম (৩০) এবং তাদের আত্মীয় একই গ্রামের রজব আলীর ছেলে হাফিজুর রহমান (১৬)। আরও নিহত হয়েছেন পিকআপ ভ্যানের চালকের সহকারী মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার পংশিপুর গ্রামের রহিম (২২)। তারা সবাই দুর্ঘটনার কবলে পড়া পিকআপ ভ্যানের যাত্রী ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাখরনখর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তারা কর্মক্ষেত্রে কাজ শেষে পিকআপ ভ্যানে করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। মাধবপুর থানার ওসি আব্দুলাহ আল মামুন জানান, শ্রমিকরা একটি পিকআপ ভ্যান করে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় ফিরছিলেন। তাদের পিকআপ ভ্যানটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাখরনখর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে দুজন নারীসহ উল্লেখিত চারজন নিহত হন। গুরুতর আহত পাঁচজনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহ : ভালুকাণ্ডগফরগাঁও সড়কের নন্দিবাড়ি বাজার এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ভালুকা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আজগর আলীর ছেলে মো. লাল মিয়া (৩২) এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সুরজত আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪৮)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দ্রুতগতির একটি হায়েস কালো রংয়ের মাইক্রোবাস ভালুকাণ্ডগফরগাঁও সড়কের নন্দিবাড়ি বাজার এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশার চারজন গুরুতর আহত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে দুই জনের। গতকাল ভোর ৫টায় চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নয়মাইল বাজারে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভোরে চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা রয়েল পরিবহনের একটি দ্রুতগতির বাস নয়মাইল বাজারে একটি পাখিভ্যানকে চাপায় দেয়। এতে ভ্যানের যাত্রী আব্দুর রাজ্জাক (৭০) ও সরোয়ার হোসেন (৬৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিগদ আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে এবং সরোয়ার হোসেনের বাড়ি মোহম্মাদ জুম্মা গ্রামে।
সিরাজগঞ্জ : উল্লাপাড়ায় ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং আরো দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল ভোর ৬টায় উল্লাপাড়ার নয়নগাতি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মাইক্রোবাসের ড্রাইভার বাবলু ও যাত্রী মানিক। তাদের দুজনেরই বাড়ি পাবনার কাশিনাথপুরে। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর রউফ জানান, পাবনার নগরবাড়ি থেকে সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ট্রাকটি নয়নগাতি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীতদিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের চালক ও এক যাত্রী নিহত হন এবং আহত হন আরো দুজন।
কুমিল্লা : দেবিদ্বার ও বুড়িচংয়ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টায় দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় ট্রাকচাপায় আব্দুল্লাহ নামে এক যুবক প্রাণ হারান। এর আগে, সকাল ৯টায় বুড়িচংয়ে অতিরিক্ত মালামালবোঝাই একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা খাদে পড়ে চালক আল আমিন নিহত হন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেবিদ্বার উপজেলার শাকতলার নিজ বাড়ি থেকে খালার বাড়ি বুড়িচংয়ে খালার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হন আবদুল্লাহ। পথে জাফরগঞ্জ গঙ্গামন্ডল রাজ ইনস্টিটিউটের সামনে পৌঁছালে কুমিল্লামুখী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই আবদুল্লাহ প্রাণ হারান। আহত হন তার পেছনে থাকা অপর একজন। পরে স্থানীয়রা ট্রাকটি আটক করে পুলিশে খবর দেয়। নিহত আব্দুল্লাহ দেবিদ্বার উপজেলার শাকতলা এলাকার আব্দুল আউয়াল ভুঁইয়ার ছেলে।
তিনি কিছুদিন পরেই বিদেশগামী ছিলেন। বুড়িচংয়ে অতিরিক্ত মালমাল বোঝাই একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা খাদে পড়ে চালক আল আমিন নিহত হয়েছেন। তিনি পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার টাকই গ্রামের রোমান মিয়ার ছেলে। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বুড়িচং থানার ওসি মোহাম্মদ আজিজুল হক।