ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসরায়েলি সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েলি সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সিরিজ অভিযান পরিচালনা করেছে ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহর নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী। ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের পাশের একটি সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে জুলফিকার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন তারা। পাশাপাশি, আরব সাগরে দুটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে সমন্বিত হামলা চালানো হয়েছে। ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসনের জবাবের ধারাবাহিকতায় এসব হামলা চালানো হয়। এক টেলিভিশন বিবৃতিতে সারি বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় মাসের মতো আমরা মার্কিন আগ্রাসনের মুখোমুখি হচ্ছি।’ মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান, ইউএসএস কার্ল ভিনসন এবং এই দুই রণতরীর নৌবহরকে লক্ষ্য করে দুটি অভিযান চালানো হয়। এই অঞ্চলে মোতায়েনের পর এটি ছিল ইউএসএস কার্ল ভিনসনকে লক্ষ্য করে প্রথম হামলা। বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি লোহিত সাগরে আসা মার্কিন বিমানবাহী রণতরীগুলোও আগের চারটি রণতরীর মতো লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে ইয়েমেনের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, রাজধানী সানার আকাশে তারা আরও একটি মার্কিন এমকিউ-নাইন রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছেন। এর মাধ্যমে ইয়েমেনের সঙ্গে সংঘাতে মার্কিন বাহিনীর সম্পদহানির আকার আরও বড় হলো। ব্রিগেডিয়ার সারি জানান, ইয়েমেনের এসব অভিযান গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের অটুট সমর্থনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইয়েমেনি জনগণ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হামলা অব্যাহত রাখা থেকে পিছপা হবে না।

ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন হামলায় নিহত ৮০ : এদিকে, ইয়েমেনের রাস ঈসা তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫০ জন। হুথি আনসার-আল্লাহ জানিয়েছে, এটি ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম হামলাগুলোর একটি। হুথি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আলাসাবাহি গত শুক্রবার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তেল বন্দরটিতে ভয়াবহ হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড বলেছে, হুথিরা যেন জ্বালানি না পান এবং তেল বিক্রি করে কোনো অর্থ আয় করতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে হামলা চালানো হয়। আলজাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আত্তাব সানা থেকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তেল বন্দরটি ছাড়াও আরও কয়েক জায়গায় হামলা চালিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় হামলাটি হয়েছে এখানে। তিনি জানান, ইয়েমেনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাস ঈসা তেল বন্দরে রাতের হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই সাধারণ বেসামরিক মানুষ। আর এত বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর কারণে পুরো ইয়েমেনজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

ইসরায়েলি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের : ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা এমন কোনো খণ্ডিত চুক্তি মানবেন না, যা যুদ্ধের সমাপ্তি বা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা না দেয়। হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া এমন একটি প্রস্তাবের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করেন, যা অসম্ভব শর্ত দিয়ে তৈরি এবং এর মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে না। হামাসের কাছে ইসরায়েল সর্বশেষ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ১০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে প্রাথমিকভাবে মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়। যুদ্ধের অবসান এবং গাজায় সাহায্যের প্রবাহ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আলোচনার কথাও বলা হয় এই প্রস্তাবে। প্রথমবারের মতো ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের শর্তও এতে আরোপ করে। খলিল আল হাইয়া প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, সশস্ত্র আন্দোলন আমাদের স্বাভাবিক অধিকার। কারণ, দখলদারদের হাত থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত রাখার জন্য সশস্ত্র আন্দোলনের বিকল্প নেই।

হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র হবে না, জানালেন মহাসচিব: লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব যখন চাপ বাড়াচ্ছে, তখন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল নাঈম কাসেম শুক্রবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হিজবুল্লাহকে কেউ নিরস্ত্র করতে পারবে না। হিজবুল্লাহ-ঘনিষ্ঠ এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও হাতে হিজবুল্লাহর বা প্রতিরোধের অস্ত্র তুলে দেব না। ‘নিরস্ত্রীকরণ’ শব্দটাই আমাদের অভিধান থেকে বাদ দিতে হবে।’ ইসরায়েলকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ নাঈম জানান, তেলআবিবের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন প্রতিহত করতে তাদের হাতে অসংখ্য বিকল্প রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলি পদক্ষেপে একেবারে শঙ্কিত নই; এর বিপরীতে আমাদের হাতে বেশ বিকল্প রয়েছে। সঠিক সময়ে আপনারা এর বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি, তাহলে তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’ লেবাননের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করার চলমান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। মহাসচিব বলেন, লেবাননের সেনাবাহিনী, জনগণ ও হিজবুল্লাহর ঐক্য এবং এই ঐক্যের শক্তি ইসরায়েলকে তার লক্ষ্য অর্জনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ করবে।

গাজায় একদিনে নিহত ৭০ : অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় একদিনে নিহত হয়েছেন আরও ৭০ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। গত শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চালানো হামলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই গাজাসিটি এবং উত্তর গাজার বাসিন্দা। তাছাড়া, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল- অর্থাৎ গাজার সর্বত্র ব্যাপক হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী। বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তাল আল-সুলতান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই দুই ঘাঁটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে সর্বশেষ হামলা। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫১ হাজার ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। গাজার মিডিয়া অফিসের আপডেট তথ্য বলছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০’রও বেশি হবে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকাপড়া হাজার হাজার মানুষ আর বেঁচে নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত