ঢাকা শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাওর ইজারা বন্ধ করতে হবে

বললেন মৎস্য উপদেষ্টা
হাওর ইজারা বন্ধ করতে হবে

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কোনো হাওর ইজারা থাকা উচিত নয়। হাওরে ইজারা বন্ধ করতে হবে। এর প্রভাবে কী হবে না হবে, তা ভাবা যাবে না। হাওর সেখানকার মানুষের অধিকারের জায়গা, আর তা রক্ষা করাই আমাদের কাজ। গতকাল ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ : হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ সভার আয়োজন করে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)। হাওরের মালিককে এমন প্রশ্ন রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আসলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাওরগুলো রয়েছে। যদিও অধিকাংশ হাওর এলাকা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা শুধু ইজারা দিয়ে এখান থেকে রাজস্ব আহরণ করে।

তিনি আরও বলেন, হাওরকে ঘিরে একটা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। হাওর অঞ্চলের ২৯ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তাকে বলা হচ্ছে অল ওয়েদার সড়ক। পরে জানা যায় যে, সব ঋতুতেই এ সড়ক সহনশীল। অথচ এ রাস্তা তৈরির মাধ্যমে এরই মধ্যে ওই এলাকার নিদারুণ ক্ষতি হয়ে গেছে। মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছ ধরার জন্য এরই মধ্যে আমরা কারেন্ট জাল বন্ধ করেছি। কিন্তু বর্তমানে চায়নাদুয়ারী নামক জালে মাছ ধরা হচ্ছে। এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা হবে। জাল হবে মৎস্যজীবীদের একটা উপকরণ অথচ এ জাল হয়ে গেছে এক অবৈধ জাল।

প্রকৃত জেলেরা এসব অবৈধ জাল ব্যবহার করে না। কিছু মৌসুমি মৎস্যজীবী এসব জাল ব্যবহার করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উপদেষ্টা হাওর রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এর ফলে বিলুপ্ত হওয়া মাছগুলো ফিরে আসতে পারে। সুতরাং জৈবিক ব্যবস্থাপনা হবে হাওর রক্ষার একটা মূল পদক্ষেপ। হাওরে অঞ্চলের ভুক্তভোগীরা বলেন, হাওর ইজারা প্রায় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালী মহাজনদের হাতেই যায়। ফলে সাধারণ মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হন। মৎস্যজীবী সমিতির নামে হাওর ইজারা নেয়ার ক্ষেত্রেও নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের সমর্থকরা হাওর লিজ নিয়ে থাকে। তাই হাওর লিজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত সাধারণ মৎস্যজীবী বা মৎস্যচাষিরা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। ধরার আহ্বায়ক রাশেদা কে, চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, সাবেক সচিব ও জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

এতে আরও বক্তব্য দেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, হাওর সংস্কৃতি অধ্যয়ন এবং গবেষণা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সজল কান্তি সরকার, মানবাধিকারকর্মী জাকিয়া শিশির, হাওর উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. এম মোখলেসুর রহমান। এ সময় হাওর অঞ্চলের ভুক্তভোগী আহ্লাদ খান, অঞ্জনা বিশ্বাস, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অ্যাসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এআইআরডি) পরিচালক আব্দুল হাই চৌধুরী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত