ফিলিস্তিনের গাজাসিটির আল-তুফফাহ এলাকায় প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের এক হামলায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর এক সেনা কর্মকর্তা নিহত এবং চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গত শনিবার এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি মিডিয়া। ইসরায়েলি মিডিয়া স্বীকার করেছে, গাজার পূর্বাঞ্চলে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল দিয়ে ইসরায়েলের একটি হামার ভেহিকলকে আঘাত করা হয়। হামাস যোদ্ধাদের এই হামলায় এক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা নিহত এবং চার সেনা আহত হন, যাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামাস যোদ্ধারা আল-তুফফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য আগে থেকে ফাঁদ পেতে রেখেছিল বলে জানায় টাইমস অব ইসরায়েল। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম দফায় দুই ইসরায়েলি সেনা গুরুতর আহত হন। এরপর যখন উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, তখন আগে থেকে পুঁতে রাখা একটি এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে সার্জেন্ট মেজর র্যাঙ্কধারী এক সেনা কর্মকর্তা নিহত ও দুই সেনাসদস্য আহত হন। পরে হেলিকপ্টার এসে নিহত ও আহত সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়। এদিকে, হামাসের আল-কাসসাম ব্রিগেডস আল-তুফফার পূর্বে আল-সুরানি এলাকায় ইসরায়েলের একটি মারকাভা ট্যাঙ্ক এবং একটি ডি-নাইন বুলডোজারে দুটি ইয়াসিন হানড্রেড-ফাইভ শেল দিয়ে আঘাত হানেন। এরপর ট্যাঙ্ক ও বুলডোজারে আগুন ধরে যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে, গাজার ভেতরে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর প্রবল আগ্রাসনের মুখেও প্রতিরোধ যোদ্ধারা সুসংগঠিত ও সক্রিয় রয়েছেন। দখলদার বাহিনীকে লক্ষ্য করে উচ্চমানের কৌশলী হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ইয়েমেনে আরেকটি মার্কিন এমকিউ-৯ ড্রোন ধ্বংস: ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহর নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী আরও একটি মার্কিন এমকিউ-নাইন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। সানা গভর্নরেটের আকাশসীমায় শত্রুতামূলক অভিযান পরিচালনার সময় ড্রোনটিকে ভূপাতিত করা হয় বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি। তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি সারফেস-টু-এয়ার মিসাইলের মাধ্যমে ড্রোনটিকে সফলভাবে আঘাত করা হয়। সারি বলেন, এর মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়, এপ্রিলের মধ্যে ষষ্ঠ এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২১তম মার্কিন ড্রোন ধ্বংস করলেন তারা। ইয়েমেনি মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন মার্কিন বিমান হামলা, বেসামরিক নাগরিক, তাদের সম্পদ ও সরকারি-বেসরকরি স্থাপনা ধ্বংস করে ইয়েমেনি জনগণকে তাদের লক্ষ্য থেকে সরানো যাবে না। ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ সংগ্রামের পক্ষে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে লড়তে থাকবেন তারা। এবং গাজায় আগ্রাসন বন্ধ এবং উপত্যকাটি থেকে অবরোধ তুলে না নেয়া পর্যন্ত তাদের এই লড়াই অব্যাহত থাকবে। ইয়েমেনে অব্যাহত মার্কিন আগ্রাসন, বিশেষ করে পশ্চিম ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে সাম্প্রতিক বিমান হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হওয়ার পর প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ড্রোনটি ধ্বংসের খবর দিল ইয়েমেনি বাহিনী। আগেরদিনও তারা মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থের বিরুদ্ধে সিরিজ অভিযান চালিয়েছিলেন। ওইদিন জুলফিকার ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হামলা চালানো হয়। একইসঙ্গে আরব সাগরে মোতায়েন দুই মার্কিন বিমানবাহী রণতরীর বিরুদ্ধে সমন্বিত হামলা চালায় ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী। এদিন একটি এমকিউ-নাইন রিপার ড্রোনও ধ্বংস করেন তারা।
বন্দি মার্কিন-ইসরায়েলি এডেন সম্ভবত বেঁচে নেই: হামাস: গাজায় বন্দি ইসরায়েলি সেনা এবং মার্কিন-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক এডেন আলেক্সান্ডারের সঙ্গে হামাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকে হামাসের যে কর্মী নিরাপত্তা দিতেন, তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। গত শনিবার হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা জানান, এডেন আলেক্সান্ডার যেখানে ছিলেন, সেখানে গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। এরপর তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ডের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েকদিন পর হামাসের যোদ্ধারা ওই গার্ডের লাশ উদ্ধার করেন। তবে এডেন আলেক্সান্ডারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এডেন আলেক্সান্ডার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আল-আকসা ফ্লাড অভিযানে তাকে গাজা সীমান্ত থেকে বন্দি করেন হামাসের যোদ্ধারা। এই বন্দির আমেরিকান নাগরিকত্ব থাকায় তাকে মুক্ত করতে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছিল। এই আলোচনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের বহুবিধ শর্তের বেড়াজালে চুক্তি আটকে থাকায় ওই সময় তাকে মুক্ত করতে পারেনি মার্কিন প্রশাসন। এডেন এবং অন্য চার মার্কিন বন্দির লাশ ছাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে আবার সরাসরি আলোচনা করবে বলে শোনা যাচ্ছিল। এর মধ্যেই হামাস জানাল, এডেন আলেক্সান্ডারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি হামলায় তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আর এটি যদি সত্যি হয়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর মার্কিন চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। কাসসামের মুখপাত্র আবু ওবায়দা শনিবার বলেন, ‘বর্বর আগ্রাসনের পরও আমরা সব বন্দিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। তবে ইসরায়েলিদের অব্যাহত বোমা হামলার কারণে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে।’ মুখপাত্র আরও বলেন, ‘বন্দিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে মিথ্যাচার করছে এবং সাবেক বন্দিদের কাছ থেকে মিথ্যা সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রচার করছে ইসরায়েল।’ আবু ওবায়দা বলেন, ‘বন্দিদের সঙ্গে সুন্দর ও মানবিক আচরণ করা ইসলাম ধর্মে আবশ্যিক এবং আমরা ইসলামের সেই নির্দেশনা অনুসরণ করি।’
ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলি বন্দির আকুতি: গাজায় বন্দি ইসরায়েলি এলকানা বোহবোতের তৃতীয় ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। এতে তাকে একটি ‘মক’ টেলিফোন কলে নিজের পরিবারের উদ্দেশে কথা বলতে এবং তাদের কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি করতে শোনা গেছে। ভিডিওতে এলকানা বোহবোত বলেন, ‘বিশ্রাম নিও না; আমার মুক্তির জন্য সবকিছু করতে থাকো।’ তিনি বলেন, ‘আমার এই আবেদন রাষ্ট্রের কাছে, সরকারের কাছে এবং সব মানুষের কাছে।’ বোহবোত জানান, তার স্বাস্থ্য ভালো নেই। তিনি মৃত্যু-শঙ্কায় ভুগছেন। হামাস ভিডিওটি এমন সময় প্রকাশ করল, যখন তারা ইসরায়েলের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন এবং নেতানিয়াহু ইসরায়েলি বাহিনীকে হামাসের ওপর হামলার পরিধি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। হামাস বলেছে, অস্থায়ী নয়, গাজায় যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তির বিনিময়ে তারা অবশিষ্ট বন্দিদের একবারে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক। গাজায় এখনও পায় ৫৯ জন বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাসের সঙ্গে তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধানের বৈঠক: যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ নিয়ে হামাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন। খবরে বলা হয়, কালিন হামাসের রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান মোহাম্মদ দারবিশ এবং তার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে বৈঠকটি কোথায় হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, তুরস্কে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে আনাদোলু জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তারা গাজার জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো পরিকল্পনা মোকাবিলার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন। কালিন তাদের তুরস্কের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে আশ্বস্ত করে বলেন, আঙ্কারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল কিংবা সংযুক্ত করার যে কোনো নতুন প্রচেষ্টার দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করবে। আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজাজুড়ে ৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরদিন রোববারও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫১ হাজার ১৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।