ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসরায়েলি যুদ্ধযানে হামাসের হামলা, কয়েকজন সেনা নিহত

* হামাসে ৩০ হাজার তরুণ নিয়োগ * মার্কিন রণতরী অকার্যকর, জানাল ইয়েমেন * গাজার প্রতি সমর্থন অ্যাঞ্জেলিনা জোলির * ইসরায়েলি তদন্তকে মিথ্যাচার বলল রেড ক্রিসেন্ট * গাজায় নিহত আরও ৩৩, লেবাননে ২, ইয়েমেনে ১২
ইসরায়েলি যুদ্ধযানে হামাসের হামলা, কয়েকজন সেনা নিহত

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা রোববার উত্তর গাজার বেইত হানুনের পূর্বে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে এক জটিল অভিযান সম্পন্ন করেছেন। অভিযানের বিস্তারিত জানিয়ে আল-কাসসাম বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা ডিভিশনের কমব্যাট ইন্টেলিজেন্স ব্যাটালিয়নের ব্যবহার করা একটি মিলিটারি স্টর্ম ভেহিকলকে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক শেল দিয়ে আঘাত করেছেন তারা। এতে সেনাদের মধ্যে নিশ্চিতভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরপর হতাহতদের উদ্ধারের জন্য আরেকটি সেনাদল এলে তাদের ওপর অ্যান্টি-পার্সোনেল এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতেও কয়েকজন সেনা নিহত এবং আহত হন। আল-কাসসাম আরও জানিয়েছে, একইসঙ্গে সেখানে নতুন করে স্থাপিত ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানে চারটি আরপিজি শেল দিয়ে আঘাত করা হয়। মর্টার হামলাও চালানো হয় দখলদার সেনাদের ওপর। হামাসের সামরিক মিডিয়া গাজাসিটির পূর্বে আল-তুফফাহ এলাকায় হানাদার বাহিনীর গাড়িগুলোর ওপর চালানো এই হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। আল-কাসসাম এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘ব্রেকিং দ্য সোর্ড’। ইসরায়েলি মিডিয়া এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ অভিহিত করে হামলায় এক সেনা নিহত এবং চার সেনা গুরুতর আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান উল্লেখ করেছে, উত্তর গাজার এমন একটি স্থানে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা হলো, যে এলাকার কাছাকাছি একটি সেনা অবস্থান গত সপ্তাহে পরিদর্শন করেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইকেল মিলস্টেইনের বরাতে কান বলেছে, আদর্শিক দৃঢ়তার কারণেই হামাসের অবস্থান এখনও শক্তিশালী রয়েছে এবং এ কারণেই শেষ পর্যন্ত তাদের পাল্টাহামলা অব্যাহত থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বুঝতে বাকি নেই যে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত হামাসের যোদ্ধারা লড়াই করতে প্রস্তুত।’ এদিকে, প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস গত রোববার দুটি ইসরায়েলি সামরিক ড্রোন জব্দ করার ফুটেজ প্রকাশ করেছে। গাজাসিটির আকাশে গোয়েন্দা মিশন চালানোর সময় ড্রোন দুটিকে জব্দ করেন তাদের যোদ্ধারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নির্মূল করার নামে যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও মাঠের পরিস্থিতি বলছে, দেড় বছরের এই বর্বরতা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তেমন দুর্বল করতে পারেনি। গোপন অবস্থান থেকে যে কোনো সময় ভয়াবহ আঘাত হানার সক্ষমতা রাখেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

হামাসে ৩০ হাজার তরুণ নিয়োগ: কয়েকটি আরব ও ইসরায়েলি মিডিয়া গত রোববার জানিয়েছে, হামাসের সামরিক শাখা গাজার প্রায় ৩০ হাজার তরুণকে নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে। ফিলিস্তিনি সূত্রের বরাতে সৌদি আরবের আল আরাবিয়া বলেছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই আগে হামাসের সামরিক শাখা পরিচালিত গোপন সামরিক শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট করা হয়নি, এসব প্রশিক্ষণ যুদ্ধকালীন সময়ে হয়েছে, না কি আগেই তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের গেরিলা যুদ্ধ, রকেট হামলা ও বিস্ফোরক স্থাপনে পারদর্শী করা হয়েছে বলে ইসরায়েলি ওয়াইনেটের খবরে বলা হয়। ওই প্রতিবেদনেও তাদের নিয়োগের সঠিক সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি। তবে অনুমান করা হয়েছে, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। প্রতিবেদন অনুসারে, হামাসের কাছে ড্রোন ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব থাকলেও তারা ইসরায়েলের অবিস্ফোরিত ক্ষেপণাস্ত্র, সেনাদের কাছ থেকে জব্দ করা গোলাবারুদ ও অন্য যুদ্ধসরঞ্জাম পারদর্শিতার সঙ্গে পুনর্ব্যবহার শুরু করেছেন। ভূমিভিত্তিক বিস্ফোরক ডিভাইস এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র তৈরিতে এসব ইসরায়েলি উপাদান ব্যবহার করে হামাস বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে ওয়াইনেট। মার্কিন রণতরী অকার্যকর, জানাল ইয়েমেন: ইয়েমেনের প্রতিরোধ আন্দোলন হুথি আনসার-আল্লাহর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত ন্যাশনাল ডিফেন্স কাউন্সিলের এক বৈঠকে গত রোববার বলেছেন, ইয়েমেনের ওপর মার্কিন আগ্রাসন প্রথম দিনগুলোতেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। নিশ্চিত তথ্যের বরাতে তিনি জানান, বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান তার কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এবং আগ্রাসনের প্রথম দিনগুলোতেই এটি পরিষেবার বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, রণতরী হ্যারি ট্রুম্যান থেকে একবার বা দুইবার হামলা চালানোর পর এটি ইয়েমেনি হামলায় অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর অন্যান্য স্থান থেকে হামলা শুরু করে মার্কিন বাহিনী। আল-মাশাত উল্লেখ করেন, এখন ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর কাছে উচ্চমানের গোয়েন্দা সক্ষমতা রয়েছে, যার ফলে মার্কিন আগ্রাসন পরিচালিত হওয়ার আগেই তা প্রতিহত করতে সক্ষম হচ্ছেন তারা। এই সক্ষমতাই ইয়েমেনকে সম্ভাব্য বিশাল ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে ধরনের চ্যালেঞ্জই আসুক, তারা গাজার সমর্থনে প্রতিরোধ লড়াই থেকে একটুও সরবেন না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর আগ্রাসন চালাবে, আর আমরা চুপ থাকব, তা হতে পারে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে আল-মাশাত বলেন, ইয়েমেনের জনগণ আপনার ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা ও বোমারু বিমানকে ভয় পান না। গাজার প্রতি সমর্থন অ্যাঞ্জেলিনা জোলির: বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি আবারও গাজার মানুষের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে গাজা নিয়ে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেন তিনি। দীর্ঘ দুই দশক ধরে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর শুভেচ্ছাদূত ও বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করা জোলির শেয়ার করা ওই পোস্টে গাজার পরিস্থিতিকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘ফিলিস্তিনিদের ও তাদের সাহায্যকারীদের জন্য এক গণকবর’ হিসেবে। পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী যখন আকাশপথ, স্থলপথ ও সমুদ্রপথে গাজায় তাদের সামরিক অভিযান আবারও শুরু ও সম্প্রসারিত করছে, তখন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জীবনব্যবস্থা আবারও পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।’ পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, গাজায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলা মানবিক সহায়তা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ওপর স্পষ্ট হুমকি তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনে গাজায় চলমান ‘অমানবিক ও প্রাণঘাতী অবরোধ’ অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস। পোস্টে একই ধরনের আহ্বান জানিয়ে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ইসরায়েলি তদন্তকে মিথ্যাচার বলল রেড ক্রিসেন্ট: গাজায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মীকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রাখার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যাচারে ভরা’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট। রেড ক্রিসেন্টের মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ এএফপিকে বলেছেন, ‘প্রতিবেদনটি মিথ্যাচারে পূর্ণ। এটি অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য; কারণ এতে হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে এবং দায়ভার এড়িয়ে ফিল্ড কমান্ডের ‘ব্যক্তিগত ভুল’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’

গত ২৩ মার্চ ভোরে গাজার দক্ষিণাঞ্চল রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তাদের গুলিতে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্টের আটজন কর্মী, সিভিল ডিফেন্সের ছয়জন কর্মী এবং এক জাতিসংঘ কর্মী প্রাণ হারান। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে দায় স্বীকার করলেও দাবি করেছে, ঘটনাটি একটি ‘অপারেশনাল ব্যর্থতার’ ফল। তবে রেড ক্রিসেন্ট বলছে, এটি ছিল ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিত হামলা, যার মাধ্যমে মানবিক সাহায্যকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দাবি করেছিল। রেড ক্রিসেন্টের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে আটজন সংস্থাটির নিজস্ব কর্মী এবং ছয়জন বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। তাছাড়া একজন জাতিসংঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মী ছিলেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও এক উদ্ধারকর্মী। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, নিহতরা আহতদের চিকিৎসা দিতে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হন। হত্যার পর লাশগুলো বালুর নিচে পুঁতে রাখেন সেনারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত