ঢাকা ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কানাইঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত

অবাধে আসছে রোগাক্রান্ত ও অস্বাস্থ্যকর ভারতীয় গরু

অবাধে আসছে রোগাক্রান্ত ও অস্বাস্থ্যকর ভারতীয় গরু

সিলেটের কানাইঘাটের দনাসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে রোগাক্রান্ত, আর অস্বাস্থ্যকর ভারতীয় গরু আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে এ গরুর মাংসতে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকছে, ঠিক তেমনি দেশীয় প্রজাতির গবাদিপশুতে ছোঁয়াছে ক্ষুরাসহ নানা রোগও ছড়িয়ে পড়ছে। এজন্য চোরাচালান বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

সীমান্তবর্তী একাধিক সূত্র জানায়, করোনা মহামারির কারণে কয়েক মাস ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু আসা বন্ধ ছিল। তবে মাস দিন থেকে ফের আসতে শুরু করেছে গরু। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না থাকায় সম্প্রতি গরুর চোরাচালান বেড়ে গেছে। প্রতিদিন রাতেই আসছে গরু। আর অবৈধভাবে আনা এসব গরু স্থানীয় সড়কের বাজারের পশুর হাটে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখান থেকেই ট্রাকে করে তা নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম পিএসসিও দনা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, সীমান্ত এলাকা খোলা থাকায় এক সঙ্গে ১০০ থেকে ১৫০ শ্রমিক ভারত থেকে গরু আনতে যায়। অনেক সময় এসব শ্রমিক বিজিবি টহল দলের ওপর আক্রমণ করে। এমনকি বিজিবি টহল দলের ওপর তারা পাথর নিক্ষেপ করে। এ সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালানি বন্ধের চেষ্টা তারা চালাচ্ছেন বলে জানান এ বিজিবি কর্মকর্তা। দনাছাড়া বাকি সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধ আছে বলে জানান তিনি। সড়কের বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, মধ্যরাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ভারতীয় গরু এ বাজারে আসে। আর দুপুরের আগেই সব গরু সেখান থেকে ট্রাকে করে সরিয়ে

নেওয়া হয়। তাদের কথার প্রমাণ মিলেছে সরেজমিন অনুসন্ধানেও। বুধবার সকাল ৮টায় সেখানে গিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক ভারতীয় গরু বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখা গেছে। আর এসব গরু নিতে ছোট পিকআপ এবং ট্রাকের সারিও ছিল বেশ লম্বা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। মূলত রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমেই তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবাধে ভারতীয় গরুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতেও চান না।

এ বিষয়ে চোরাচালানে নাম আসা সড়কের বাজারের ইজারাদার জয়নাল এবং গরু ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। ফলে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাস্টার মহিউদ্দিন বলেন, ভারতীয় গরুর মাংস মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর চোরাচালানে অবৈধভাবে গরু নিয়ে আসার কারণে দেশের খামারিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ কারণে চোরাচালান বন্ধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ভারত থেকে বৈধপথে পশু আমদানি করা হতো খাটালের মাধ্যমে। কিন্তু কয়েক বছর থেকে খাটাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর অবৈধ পথে চোরাচালানের মাধ্যমে যেসব পশু আসে; তার বেশিরভাগই রোগাক্রান্ত আর অস্বাস্থ্যকর। এছাড়া বিভিন্ন স্টেরয়েড দিয়ে এসব পশু মোটাতাজাও করা হয়; ফলে এর মাংস মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ। পাশাপাশি চোরাচালানে আসা পশু থেকে দেশি গবাদিপশুতে ক্ষুরাসহ বিভিন্ন ছোঁয়াছে রোগ ছড়ায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। চোরাচালান বন্ধের বিষয়ে উপজেলা সমন্বয় বৈঠকে তার বক্তব্য তুলে ধরবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সিলেট জেলা পুলিশের কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাহিদুল হক বলেন, সীমান্ত দিয়ে পশু আসা বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এ কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে চোরাইপথে পশু নিয়ে আসা বন্ধ ছিল। তবে নতুন করে পশু আসার বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত