ঢাকার অদূরে ভাওয়াল গড়ের পাশে মনোরম পরিবেশে শিক্ষা ও গবেষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক ইপসা) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত সুনাম অর্জন করে আসছে। মাঝখানে প্রতিষ্ঠানের গবেষণার মান নিম্নমুখী হলেও বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া ২০১৭ সালের ১১ জুন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণার মান আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ফলে ২০২১ সালে বিশ্বখ্যাত স্কোপাস ও সিমাগো ইনডেক্স জরিপ/র্যাঙ্কিংয়ে বশেমুরকৃবি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থানÑ এই তিন সূচকে প্রথম স্থান লাভ করেছে। এছাড়াও একই ইনডেক্স জরিপে বশেমুরকৃবি গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যথাক্রমে ৪র্থ ও ২য় স্থান লাভ করেছিল। তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-এর হেকেপ প্রকল্পের আওতায় (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল, আইকিউএসি) এর গাইডলাইন মোতাবেক গঠিত এক্সপার্ট টিম (একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞসহ) কর্তৃক সম্পাদিত সেল্ফ অ্যাসেসমেন্টে বশেমুরকৃবি’র পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামটি এক্সিলেন্ট; কৃষি অনুষদ ও মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ দুইটি খুবই ভালো হিসাবে মূল্যায়িত হয়েছে। এই সম্মান অর্জনে প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়ার অত্যন্ত দক্ষ, স্বচ্ছ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং গৃহীত উদ্যোগসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার সময়ে গৃহীত উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ এবং অর্জনসমূহের কতিপয় উল্লেখ করা হলোÑ
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে নিজস্ব/রাজস্ব অর্থায়নে কৃষিতে যুগোপযোগী ১০০টি দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন এবং করছেন। ফলে চলতি করোনাকালীনও ২৪৩টি উচ্চমান গবেষণা প্রকাশনাসহ বিভিন্ন ফসলের ১৪টি নতুন জাত জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অবমুক্ত করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরল সম্মান অর্জনে ব্যাপক অবদান রেখেছে। উপাচার্যের অগ্রণী ভূমিকায় ‘কানাডাস্থ সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ইনস্টিটিউট’-এর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাসমূহের মধ্যে উন্নততর গবেষণার জন্য বিশেষায়িত সংস্থা ‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডু এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি সেন্টার’ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তাহাছাড়া সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং এর লিংক চেয়ার বশেমুরকৃবিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বশেমুরকৃবি’র যৌথ ডিগ্রি প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমান বজায় রাখতে উপাচার্য মহোদয় বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশীয় বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সহযোগিতা কার্যক্রম সফলতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৪টি বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমাঝোতা স্মারক ও চুক্তির মাধ্যমে কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষা ও গবেষণাকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নয়নের জন্য বিএস, এমএস ও পিএইচডি কোর্স কারিকুলামসমূহে ‘আউটকাম বেজড শিক্ষা’ এ পরিবর্তন; বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ‘ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; ‘ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ’; ‘ইনস্টিটিউট অব ফুড সেফটি অ্যান্ড প্রসেসিং’ এবং ‘অ্যাগ্রো-মেটেরিওলজি বিভাগ’ চালুর জন্য গবেষণাগার প্রস্তুত করা হয়েছে; বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তিকরণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭ জন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাঙ্গন কার্যক্রম জোরদার করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ কাউলতিয়া ইউনিয়নে নতুন একটি ‘টেকনোলজি ভিলেজ’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ সর্বসাধারণের পর্যবেক্ষণের জন্য ‘প্রযুক্তি প্রদর্শনী মাঠ’ স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি সারাদেশে কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী মাঠ ও কৃষক-কৃষাণীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাণিস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত একটি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। প্রথম বারের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি, শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে তথ্যসম্বলিত প্রসপেক্টাস ও বার্ষিক প্রতিবেদন (সর্বশেষ ২০১০) প্রকাশ; নিয়মিতভাবে জার্নাল, রিসার্চ অ্যাবস্ট্রাক্ট, বশেমুরকৃবি বার্তা ও পরিমার্জিত গ্র্যাজুয়েট ক্যাটালগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে (সাবেক ইপসা) ২০১৯ সাল পর্যন্ত সকল পিএইচডি গ্র্যাজুয়েটদের গবেষণার অ্যাবস্ট্রাক্ট সম্বলিত ‘বুক অব ডিসার্টেশন অ্যাবস্ট্রাক্ট’ প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণার্থে শূন্যপদে সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো প্রথমে লিখিত পরীক্ষা এবং পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ প্রশংসা করেছেন, তারই সাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা, কর্মস্পৃহা ও শৃঙ্খলা সর্বোপরি মানোন্নয়নের জন্য জুন ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪১টি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ বা কর্মশালা সম্পন্ন করা হয়েছে। উক্ত ট্রেনিংসমূহের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট এর জন্য পাঁচটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হবে এবং নতুনভাবে উপাচার্য নিয়োগ হবে যার এখতিয়ার সম্পূর্ণ সরকারের। সরকারই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে। বর্তমান উপাচার্যের দক্ষ ও সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং তার গৃহীত উদ্যোগে বিশ^বিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সাফল্য ও অর্জনকে ম্লান করার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ^বিদ্যালয়টির সুনাম ক্ষুণœ হবে বলে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ মনে করছেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। তাহলেই জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় আরও যুগোপযোগী ও কর্মমূখী শিক্ষা ও গবেষণায় আশানুরূপ সফলতা আসবে।