ঢাকা ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাকযুদ্ধে আইভী-তৈমূর

বাকযুদ্ধে আইভী-তৈমূর

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পরে জমে উঠেছে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাক্যুদ্ধ। প্রচারণার পাশাপাশি একে অপরের প্রতি ছুড়ছেন বাক্যবাণ। এতে করে জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বৃহস্পতিবারও এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।

আমার পাশে এমপিরা নাই :আইভী : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘জালকুড়ি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আমি আশা করি, এ এলাকায় নৌকা জয়যুক্ত হবে। আমি দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করেছি। নিবেদিতপ্রাণ হয়েই কাজ করেছি। কোনো চাঁদাবাজি করিনি, সন্ত্রাস করিনি অথবা আমার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এরকম কেউ বলতে পারবে না। আমি আমার ঈমান আমল ঠিক রেখে অত্যন্ত সততার মধ্য দিয়ে কাজ করেছি। আশা করি, ভোটাররা আমাকে ভোট দেবে। আমাকে জয়যুক্ত করে আগামী ৫ বছর কাজ করার সুযোগ করে দেবে।’ কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপিরা নির্বাচনি এলাকায় এসে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের অভিযোগের বিষয়ে আইভী বলেছেন, ‘আমার সাথে তো কেউ নাই। আমি তো প্রচারণায় আছি। আমার সাথে তো কোনো সংসদ সদস্য নেই। সুতরাং ওনি (তৈমূর) যে কথা বলে আমার মনে হয় ঠিক না। এখানে আমার সাথে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা ও মুক্তিযোদ্ধারা এবং এলাকাবাসী আছেন। আমার পাশে এমপিরা নাই। এমপিরা নিয়ম মেনেই কাজ করছেন।’ এ এলাকার মানুষের চাহিদা স্কুল ও একটি মাঠ। কিন্তু এখানে জায়গা নেই। যদি মানুষ আমাকে জয়যুক্ত করে তাহলে জায়গা অধিগ্রহণ করে স্কুল ও মাঠ করে দেওয়া হবে। 

ভয় পাওয়ার লোক তৈমূর আলম খন্দকার না : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, আমি নারায়ণগঞ্জ শহরে নিজের পায়ে হেঁটে এতদূর এসেছি। মিছিলে সন্ত্রাসীদের গুলিবিদ্ধ হয়েছি। বহুবার পুলিশের মার খেয়েছি। ভয় পাওয়ার লোক তৈমূর আলম খন্দকার না। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নাসিকের ১৮নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশে একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জেই যথেষ্ট নেতা আছে। আর আমিই তো আল্লাহর রহমতে জাতীয় পর্যায়ের নেতা। নারায়ণগঞ্জের জনগণ আমার পাশে থাকলেই চলবে। নারায়ণগঞ্জের নেতাদেরই আমি যথেষ্ট মনে করি। তৈমূর বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে সে অনেক কিছু বলতে পারে। তবে আমি যা বলি কাগজে-কলমে বলি। ডকুমেন্ট ছাড়া কোনো কিছু বলি না। সিটি করপোরেশনের অনেক ডকুমেন্ট আমার হাতে। এখানে গণবিপ্লব হতে যাচ্ছে। জনগণের জয় হবে।

আচরণ বিধির প্রসঙ্গে তৈমূর বলেন, যেখানেই আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সেটা প্রতিহত করা। নয়তো আচরণবিধি লঙ্ঘন হতেই থাকবে। সরকারি দল তো আমলাদের একটা সুবিধা পায়। সেটাকে তারা যেন কাজে না লাগাতে পারে সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য আমি অনুরোধ জানাব।

আমার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। আমি মসজিদে গিয়েছি, আমি যেতেই পারি। আমি কোনো পথসভা করিনি। আমি আরচণবিধি মেনে চলেছি। ১৬ ডিসেম্বর বিএনপির বিজয় মিছিলে আমার সভাপতিত্বে করার কথা ছিল। সেখানে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে নেতাকর্মীদের মনে কষ্ট দিয়ে আমি সেই মিছিলে যাইনি। আমি অভিযোগ করেছি, আওয়ামী লীগের সমাবেশে এমপিরা এসে প্রতীকসহ সরাসরি ভোট চেয়েছে।

তৈমূর আরও বলেন, আমি জনগণের চাহিদার কারণে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমার মনে হচ্ছে, জনগণ তাদের প্রার্থী খুঁজে পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জকে আমরা ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন সিটি করব। নারায়ণগঞ্জ শহর হবে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহর।

আচরণবিধি প্রসঙ্গে তৈমুর বলেন, যেখানেই আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সেটা প্রতিহত করা। নয়তো আচরণবিধি লঙ্ঘন হতেই থাকবে। সরকারি দল তো আমলাদের একটা সুবিধা পায়। সেটাকে তারা যেন কাজে না লাগাতে পারে সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাই।

প্রসঙ্গত আগামী ১৬ জানুয়ারি নাসিকের নির্বাচনে হাতি মার্কা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৈমূর আলম খন্দকার।

এদিকে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি মেয়র পদে প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ, ‘দেওয়াল ঘড়ি’ প্রতীকের খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুনও গণসংযোগ করেছেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ৭ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে লড়াই করবেন ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৪ জন। গত মঙ্গলবার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। উল্লেখ্য, নাসিকের তৃতীয় নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এরই মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন এবং হিজড়া ভোটার ৪ জন। এরই মধ্যে নতুন ভোটার বেড়েছে ৪২ হাজার ৪২৬ জন। এছাড়া এবার ২৭টি ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮৭টি, বুথের সংখ্যা ১ হাজার ৩০১টি। এছাড়া অস্থায়ী বুথের সংখ্যা ৯৫টি। আগামী ১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত