ময়মনসিংহ জেলায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৮ শত কোটি টাকার উন্নয়নকাজে ধীরগতি চলছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, কর্তা ব্যক্তিদের তদারকি অভাব, ঠিকাদারদের গাফিলতি, পরিচালনা বাজেট সংকট’সহ নানা কারণে চলমান এসব উন্নয়ন কাজগুলোয় স্থবিরতা নেমে এসেছে। এতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
সেই সঙ্গে নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহার ও ঠিকাদারি কাজের বিল ছাড়ে কমিশন বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল সূত্র জানায়, বর্তমানে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ জেলায় ২৪৭টি উন্নয়নকাজ চলমান আছে। এর মধ্যে রয়েছে চার তলা বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ভবন, ঊর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণ, ছয়তলা সরকারি কলেজ ভবন, পাঁচতলা মহিলা হোস্টেল এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন। তবে এসব উন্নয়ন নির্মাণে ঠিকাদারি কাজের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেলেও র্দীঘ ৪ বা ৫ বছরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে অর্ধেক বা তার কিছু অধিক। এমন দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের। অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি ভবনের মধ্যে তিনটির কাজ ২০১৮ সালে শেষ হলেও বিগত ১০ মাস ধরে বন্ধ আছে ঐতিহ্যবাহী আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১০তলা একাডেমিক ভবনের কাজ। এতে ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিগত বছরের জুন মাসে আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১০তলা ভবন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নামমাত্র কাজ করে বিগত ১০ মাস ধরে কাজটি ফেলে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, বার বার তাগাদা করেও ঠিকাদার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সাঁড়া পাওয়া যায়নি। এতে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে র্দীঘ সময় কাজ ফেলে রাখার পর গত ৩ জানুয়ারি ওই ঠিকাদার আনন্দ মোহন কলেজে ভবন নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য এরই মধ্যে ২০ হাজার ইট নিয়ে এসেছেন বলে নিশ্চিত করেন শিক্ষা প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএএফডি ট্রেডার্সের মালিক আহসান-উজ জামান বলেন, ১৮ মাস সময় দিয়ে ২০১৯ সালে আমাদের এই নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু ভবন নির্মাণের জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে আরও ৮ মাস পর। ফলে করোনার কারণে ৪ মাস কাজ বন্ধ এবং জায়গা বুঝিয়ে দিতে ৮ মাস দেরি হওয়ায় আমি কোনো কাজ করতে পারিনি। ঠিকাদার আরও বলেন, বর্তমানে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। এই অবস্থায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে আছি। তবুও কাজ শুরুর চেষ্টা করছি। আশা করছি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
এদিকে ফুলপুর, গৌরীপুর, ভালুকা’সহ জেলার প্রায় সব কয়টি উপজেলায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়নকাজে ব্যাপক ধীরগতি চলছে। সেই সঙ্গে ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যাবহারের অভিযোগও উঠেছে। ভালুকা উপজেলার এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উন্নয়ন কাজগুলোর বিল তৈরির প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিতে হয় সংশ্লিষ্টদের। আর এসব কমিশন ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায় করেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রকৌশলী মির্জা আহসানুল হাসান’সহ সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তারা বলেন, বিল করার সময় কমিশন তো দিতেই হয়। এটা ছাড়া কোনো অফিসেই কাজ হয় না। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সহকারী প্রকৌশলী মির্জা আহসানুল হাসানের বক্তব্য জানা যায়নি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ময়মনসিংহে আছি। এই সময়ে ময়মনসিংহের প্রতিটি সংসদীয় আসনে কমপক্ষে ৩০টি করে তিন তলা এবং চার তলা ভবন হয়েছে। সে ভবনগুলোর কাজের মানও সর্বোচ্চ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছি। এতে শিক্ষার পরিবেশও সুন্দর হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। সেগুলো খতিয়ে দেখে মানসম্পন্ন সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে। তবে অফিসে আমার অজান্তে কেউ কোনো কাজে নয়ছয় করেছে বলে আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। সেই সঙ্গে চলমান উন্নয়নকাজগুলোতে কিছুটা ধীরগতি চলছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এর নেপথ্যে করোনা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পরিচালনা বাজেট সংকটসহ নানা কারণ জড়িয়ে রয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ে চলমান উন্নয়নকাজগুলো শেষ করতে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশলে যোগদান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী। সেই থেকে প্রায় ৮ বছর ধরে তিনি আছেন ময়মনসিংহে। ফলে দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে দয়িত্ব পালন করার কারণে স্থানীয় ঠিকাদারদের সাথে তার সখ্যতা অনেক গভীর বলেও দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।