ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এক টাকায় রোগী দেখছেন রাজশাহীর ডা. সুমাইয়া

এক টাকায় রোগী দেখছেন রাজশাহীর ডা. সুমাইয়া

অসুখ হলেই মানুষ ছুটে যায় ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারের কাছে যাবার কথা শুনলেই অনেকের কপালেই পড়ে ভাজ। বিশেষ করে ডাক্তারদের ফি নিয়ে। এরপর আছে ডাক্তারদের নামে নানান অভিযোগ। তবে ব্যতিক্রমী এক ডাক্তারের সন্ধান মিলেছে রাজশাহী নগরীতে। বাবার স্বপ্ন পূরণে মাত্র ১ টাকা ফি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। সুমাইয়ার নিজের ফেসবুক এবং তার বাবার ছাপানো লিফলেট এরই মধ্য রাজশাহী শহরে বেশ সাড়া ফেলেছে। এরই মধ্যে রোগীদের চাপও শুরু হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার মনিচত্বর এলকায় সুমাইয়ার বাড়ি। সেই বাড়িতে আছে বাবার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান শিবগঞ্জ সুইটস। তার পাশেই একটি ছোট ওষুধের দোকনে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তিনি। তার এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। গতকাল সোমবার সকালে ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেলের চেম্বারের সামনে গিয়ে দেখা গেল তিনি রোগী দেখছেন। দোকানের সামনে লম্বা লাইন। লাইনে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই এসেছেন এক টাকায় চিকিৎসা নিতে। একটু এগোতেই দেখা মিললো ছোট একটি ওষুধের দোকনে তিনি বসে আছেন। পাশেই রাখা আছে দুই তিনটি প্লাস্টিকের টুল। সেখানে বসেই রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডাক্তারের টেবিলে এক পাশে রাখা আছে ছোট একটি মাটির ব্যাংক। সেই ব্যাংকেই চিকিৎসা শেষে রোগীরা ১ টাকা ফি দিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকেই রোগী সামলাতে বেশ ব্যস্ত ডা. সুমাইয়া। রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা মোসা. রেবেকা এসেছেন তার গাইনি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে পরামর্শ নিতে। চিকিৎসা শেষে তিনি বলেন, গতকাল লোকমুখে শুনে আজকে এসেছি। ম্যাডামের উদ্যোগটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। আমি এসেছিলাম, চিকিৎসা নিয়েছি। আমি যেন বলতে পারি আমি গেছি। আরও পাঁচজন যাতে এখানে আসতে পারে। উনার সেবাটা খুব ভালো। তিনি বলেন, উনি যে এইভাবে একটা মানবতার সেবা দিচ্ছেন এটা বেশ ভালো। অনেক সময় বেশি টাকা দিয়েও ডাক্তারের কাছে সেই ভাবে সেবা পাওয়া যায় না। কিন্তু তিনি ১ টাকা দিয়ে অনেক সময় নিয়ে বেশ ভালোভাবেই দেখেছেন। ডাক্তারদের কাছে অনেক সময় আমরা ভালো ব্যবহার পাই না। এখানে সেবা ও ব্যবহার দুইটাই খুব ভালো। রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র কাউসার বিন রিফাত। তিনি বলেন, আজকে সকালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। কালকে ফেসকুকে তার পোস্ট দেখে আজকে এসেছি। উনি লাইট মেরে ভালোভাবে দেখেছেন। আশা করছি তিনি এভাবে আমাদের পাশে সারজীবন থাকবেন।

আরেক কলেজ ছাত্র মারবুব মুরর্শেদ মিশু বলেন, গতকাল ডাক্তারের কথা শুনে এখানে এসেছি। এই মহতি উদ্যোগেকে আমি স্বাগত জানাই। তাছাড়া অমি স্টুডেন্ট মানুষ যেখানে কম টাকা হবে সেখানেই আমার জন্য ভালো। যেখানে একটি ডাক্তার দেখাতে ৫০০ টাকা ওষুধ সব কিছু মিলে দেড় হাজার টাকা পড়ে যায়। এখানে আসলাম এক টাকায় চিকিৎসা নিলাম। সব কিছু মিলে ওভার অল ভালো।

এবিষয়ে ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল বলেন, গতকাল থেকেই চিকিৎসা শুরু করেছেন। বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমার বাবার স্বপ্ন্ ছিল। আমার বাবার জনসেবার স্বপ্ন ছিল। তিনি নিজেও কিছু করার চেষ্টা করেন। সারাজীবন দেখে এসেছি বাবা এমন করেন। আমার বাবা এই ১ টাকার চিকিৎসার লিফলেট ছাপিয়ে নিয়ে এসেছেন। এরপর সেটিকে আমি ফেসবুকে দিয়েছি। তিনি বলেন, এখানে আমাদের বাড়ি, আমি এখানে বলা চলে সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা দেব। আসলে এক টাকাতো কোনো টাকা না। এই একটা টাকা, আমার একটি চ্যারিটি ফান্ড আছে। সেখানে এই টাকাগুলো যাবে। এই টাকাগুলো মুলত মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের কাজেই ব্যয় হবে।

ডা. সুমাইয়া বলেন, আমি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ২০১৬ ব্যাচের ছাত্রী। এরপর তিনি সেখান থেকে পাশ করে বের হয়ে রাজশাহী মেডিপ্যাথ নামের একটি হাসপাতলের ডিউটি ডাক্তার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার বড় বোন ডেন্টিস্ট, মেজ বোনও বিবিএস ডাক্তার, এক ভাই ইঞ্জিনিয়ার, তার স্বামী একজন সোনগ্রাফিক্সের ডাক্তার। ডা. সুমাইয়া বলেন, আমাদের ইচ্ছে ছিল, বাবার দোকানেই আমরা তিন বোন মিলেই এই সেবা চালু করবো। তবে দুই বোন প্রেগনেন্ট থাকায় তারা এখন বসতে পারছেন না। আমি শুরু করেছি। শুরুতেই বেশ সাড়া পড়েছে। এটি আমাদের ভালো লাগছে। আমাদের এটি চালিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত