খুলনায় ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৯৮টি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুলনায় আগের তুলনায় অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান বলছে, জেলার ১৭ থানায় ২৮টি মামলা বেশি হয়েছে। মোট মামলা হয়েছে ২৯৮টি। একই বছরের নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে অপরাধের ঘটনা ঘটেছে বেশি। এর আগে সেপ্টেম্বরেও আগস্টের তুলনায় ২৭টি মামলা বেশি হয়েছিল। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরে তুলনামূলক মামলা রেকর্ড হয়েছে কম।

স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে জেলায় অপরাধপ্রবণতা কমে এসেছে। ধীরে-ধীরে এই অবস্থার আরও উন্নতির আশা করছেন তারা।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, খুলনায় গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে তিনটির রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। অপরাধ দমনে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি, বন্ধুসুলভ আচরণ, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করায় অপরাধ কর্মকাণ্ড কমেছে। ফলে ১৭টি থানায় মামলার পরিমাণ কমে আসছিল। কিন্তু ডিসেম্বরে এসে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে।

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির জানুয়ারির সভা ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মুনিম লিংকন বিগত মাসে জেলা ও মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা তুলে ধরেন। জেলায় গত ডিসেম্বরে ১৪৯টি মামলা হয়েছে; যা নভেম্বরে হওয়া মামলার চেয়ে চারটি বেশি। মহানগরীতে ডিসেম্বরে ১৪৯টি মামলা হয়েছে; যা নভেম্বরে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ২৪টি বেশি।

খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহমদ বলেন, পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সারা দেশের মতো খুলনাতেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। মাদক সংক্রান্ত অপরাধ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে পাড়া-মহল্লায় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দিনে ও রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজ থেকে মাদক দূর করা সম্ভব। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে উঠান বৈঠকসহ সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কিশোর অপরাধ দমনে সংশ্লিষ্টদের আরও সজাগ থাকা প্রয়োজন।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জেলায় গত নভেম্বরে ১৪৫টি মামলা দায়ের হয়; যা গত অক্টোবরে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ১৫টি কম। মহানগরীতে নভেম্বরে ১২৫টি মামলা হয়েছে; যা গত অক্টোবরে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে আটটি কম। জেলায় গত অক্টোবরে ১৬০টি মামলা হয়েছে; যা সেপ্টেম্বরে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ৩৮টি কম। মহানগরীতে অক্টোবরে ১৩৩টি মামলা দায়ের হয়; যা সেপ্টেম্বরে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ১৫টি কম। জেলায় গত সেপ্টেম্বরে ১৯৮টি মামলা দায়ের হয়; যা আগস্টে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ১৩টি বেশি। মহানগরীতে সেপ্টেম্বরে ১৪৮টি মামলা হয়েছে; যা আগস্টে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ১৪টি বেশি।

জেলা পুলিশ জানায়, গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে জেলায় পাঁচটি খুন, ১৩টি ধর্ষণ, ৪২টি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং একটি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটে ফুলতলা, রূপসা, বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা থানা এলাকায়। একটি দস্যুতার ঘটনা ঘটে তেরখাদা থানা এলাকায়। এছাড়া ১৩টি ধর্ষণের মধ্যে রূপসায় একটি, বটিয়াঘাটায় তিনটি, ফুলতলায় একটি, ডুমুরিয়ায় চারটি, পাইকগাছা ও কয়রায় একটি করে ঘটনা ঘটেছে। 

পাশাপাশি ৪২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে রূপসায় আটটি, বটিয়াঘাটায় সাতটি, তেরখাদায় একটি, দিঘলিয়ায় দুটি, ফুলতলায় ছয়টি, ডুমুরিয়ায় ৯টি, দাকোপে তিনটি, পাইকগাছায় চারটি ও কয়রায় দুটি করে ঘটনা ঘটে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) সুশান্ত সরকার বলেন, পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি, বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার ও প্রযুক্তির সফল ব্যবহারের ফলে গত তিন মাসে পাঁচটি খুনের মধ্যে বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া ও তেরখাদার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। পাশাপাশি তেরখাদার দস্যুতার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে।

তেরখাদায় দস্যুতার মামলার প্রসঙ্গে তেরখাদা থানার ওসি বলেন, তেরখাদায় দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের আঘাতে এক নারী জখম হন। একদিন পর ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে বোনের বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। রাশিদার মৃত্যুর পর আসামিরা আত্মগোপন করে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সাভার থেকে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। প্রতিবেদন পেলে আদালতে চার্জশিট দিতে পারব।