কিশোরগঞ্জে ওএমএস চালের ১১ লাখ টাকা তছরুপ

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ময়মনসিংহ ব্যুরো

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা খাদ্য গুদামে ওএমএস চালের ১২টি চালানে প্রায় ১১ লাখ টাকা তছরুপের ঘটনা ঘটেছে। খোদ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। তবে, কয়েকদিন আগে আত্মসাৎ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পৌনে ১১ লাখ টাকা ডিলারের নামে ব্যাংকে জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নাজমুল ভূইয়া। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

কিন্তু ঘটনার প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই দুর্নীতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন বা কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ খাদ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট ডিলার মোহন লাল জানান, যথানিয়মে আমি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ডিও নিয়ে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে আসছি। কিছুদিন আগে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইদুর রহমান চালানের টাকা নিজে ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে যাতায়ত খরচসহ ১২টি চালানের জন্য প্রায় পৌনে ১১ লাখ টাকা নিয়ে বরাদ্দের ডিও দেন। এরপর আমি যথানিয়মে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করি।

সম্প্রতি জানতে পারি চালানের টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। এক্ষেত্রে আমার কী করার আছে? তাদের টাকা দিয়েছি বলেই তারা ডিও দিয়েছে। ঘটনাটি সরেজমিন তদন্ত করা হলে প্রমাণ মিলবে।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুর রহমান ২০০১ সালে পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর পূর্বধলা, ধলা, কেন্দুয়া ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থানে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তারপরও রহস্যজনক কারণে বারবার তাকে দেয়া হয় প্রাইজপোস্টিং।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খাদ্য বিভাগে প্রায় সময়ই দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু মহাপরিচালক দপ্তরের একটি স্বার্থান্বেষী মহল ওইসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পক্ষ নিয়ে নানাভাবে পাশ কাটিয়ে অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে থাকেন। এরপর অনৈতিক সুবিধায় তাদের দেয়া হয় প্রাইজপোস্টিং। সূত্রটি আরও জানায়, ময়মনসিংহের ফুলপুরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে ক্রয় অভিযানে তৎকালীন এক খাদ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। ঘটনার তদন্ত হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। একই সঙ্গে গৌরীপুরে ১১টি ভুয়া মিলের নামে বরাদ্দে নয়ছয়ের ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং তাকে ওই ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে প্রাইজপোস্টিং দেয়া হয়েছে ময়মনসিংহের শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদামে। তাছাড়া, বিগত সময়ে ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি গুদামে মজুত নয়ছয়ের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। কিন্তু এসব ঘটনায় জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাদের বদলি করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নামে দেয়া হয় প্রাইজপোস্টিং। এ ধরনের ঘটনা খাদ্য বিভাগে অহরহ। সরেজমিন এসব ঘটনা খতিয়ে দেখলে প্রমাণ মিলবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

জানতে চাইলে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ঢাকা) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, কিশোরগঞ্জের ঘটনায় বিশেষ অডিট করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দীর্ঘ সময়েও তদন্ত কমিটি গঠন না করাসহ অন্যসব বিষয়ে তিনি এড়িয়ে যান।