জামালপুর পাসপোর্ট অফিস

দালাল-কর্মচারী সখ্য, মানববন্ধন প্রতিবাদেও প্রতিকার হয়নি

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ময়মনসিংহ ব্যুরো

দালাল-কর্মচারীর সখ্য জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের জন্য বেমানান কথা নয়। এখানে সেবার নামে চলে সংশ্লিষ্টদের পকেট ভারি করার প্রতিযোগিতা। ফলে সহজ সেবা সাধারণ সেবাপ্রার্থীদের কাছে জটিল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আবেদন জমা দিলে নানা ভুলত্রুটির অজুহাতে করা হয় হয়রানি। এ কারণে সহজে পাসপোর্ট পেতে দালালদের দারস্থ হতে হয়। আর এভাবেই দালাল-কর্মচারীর দোস্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা।

এমন অভিযোগ জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক), স্থানীয় বাসিন্দা ও অসংখ্য সেবাপ্রার্থী ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগীরা জানান, পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) উত্তম কুমার দালালদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। তার উদাসীনতায় এই অফিস ঘিরে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে অসংখ্য দালাল। তাদের দেয়া বিশেষ চিহ্নের মাধ্যমে দালালদের মধ্যস্থতায় জমা হয় আবেদন। এতে প্রতিটি আবেদনে কেমন টাকা দিতে হয় বিষয়টি খোলামেলা নতুন করে বলার প্রয়োজনীয়তা নেই।

সম্প্রতি পাসপোর্ট অফিসের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জামালপুর শহরের মির্জা আজম চত্বর এলাকায় মাবববন্ধন করেন জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) ও ভুক্তভোগীরা। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ জানান। ওই মানববন্ধনে বক্তারা প্রতিষ্ঠানের এডি উত্তর কুমারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এসব খবর জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও ক্ষমতাধর এই কর্মকর্তা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, উত্তম কুমার সব সময়ই কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছায়াতলে বসে থাকতে নিরাপদ বোধ করেন। এতে কৌশলে নিজের সুবিধাটা তিনি ভোগ করেন।

এদিকে জেলার অদুরে ইসলামপুরের সাব্বির মিয়ার ভাষ্য, দালালদের মাধ্যমে আবেদন জমা হলে দ্রুত হয় ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার কাজ। ফলে অল্প সময়েই পাওয়া যায় পাসপোর্ট। কিন্তু যারা দালালের কাছে না গিয়ে নির্ধারিত নিয়মে আবেদন জমা দেন তাদের আবেদনে নানা ভুলত্রুটির অজুহাতে করা হয় হয়রানি। ফলে দ্রুত পাসপোর্ট পেতে শেষতক তারাও দালালদের কাছে যেতে বাধ্য হন।

একটি সূত্র জানায়, বয়স বা নাম সংশোধনের আবেদনে নির্দ্দিষ্ট হারে দিতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। এক্ষেত্রে শুধু নাম সংশোধনে দিতে হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রতি বছরের জন্য দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে নির্দ্দিষ্ট হারে টাকা দিলে ওই পাসপোর্ট অফিসের সহকারী ছালাম, পরিচালক উত্তম কুমারের পরামর্শে নিজ দায়িত্বে আটকে থাকা পাসপোর্ট ছাড়িয়ে দেন খুব সহজেই। তা না করা হলে ঝুলে থাকে পাসপোর্ট।

সরেজমিন দেখা গেছে, আবেদন জমা দিতে আসা সেবাপ্রার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁিড়য়ে আছেন। একটি আবেদন জমা নেয়ার পর দীর্ঘ সময় করা হচ্ছে সময়ক্ষেপণ। এতে বিরক্ত সেবাপ্রার্থী কোনো কথা বললেই হতে হয় লাঞ্চিত। তবে একই সময়ে বিভিন্ন কায়দায় অসংখ্য আবেদন জমা দিতে দেখা গেছে একটি বিশেষ কক্ষে। এতে একজন একাই অনেক জনের আবেদন কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই জমা দিতে পারছেন।

স্থানীয় একজন গণমাধ্যম কর্মী জানান, অফিসের বাইরে ওভারসিজের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে একটি চক্র সেবা প্রর্থীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত বয়স, নামের ভুল এমন জটিল সমস্যাগুলো মোটা অঙ্কের টাকার মাধ্যমে চুক্তি করে থাকে। সমাধানের কাজটি করে থাকেন পাসপোর্ট অফিসের সালাম। এসব কাজ অসাধু দুই পক্ষের হোয়াটস অ্যাপের চালাচালির মাধ্যমে করে থাকে। দিন শেষে ফাইল অনুযায়ী টাকা বুঝে নেন অফিস সহকারী সালাম । সহকারী পরিচালক সপ্তাহের প্রতি বুধবার এসব কাজের হিসাব নেন।

এসব বিষয়ে জামালপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলীম জানান, জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এসব অনিয়মণ্ডদুর্নীতির বিরুদ্ধে গত বছরের ২ অক্টোবর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) ব্যানারে মির্জা আজম চত্বরে মাবববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের পরে পাসপোর্ট অফিসের দুইজন কর্মচারী বরখাস্ত হন। এছাড়া অত্র কার্যালয়ের এডি উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। সব কিছুর পরেও পাসপোর্ট অফিসে পূর্বের অবস্থা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রতিষ্ঠানের এডি উত্তম কুমার বলেন, এসব বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, যা খুশি লিখেন। আমার বিষয়ে হেড অফিসে কথা বলে জেনে নিন। আমি কোনো কথা বলতে পারব না।