চমেক হাসপাতালে দালাল ধরতে ছদ্মবেশে দুদক

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এস এম আকাশ, চট্টগ্রাম

দুদক চট্টগ্রম-১ এর সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন মাহমুদা আক্তার। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি ছদ্মবেশী রোগী হয়ে আসেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। কাঙ্ক্ষিত সেবার জন্য ছুটে যান হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে। সেখানে সেবা নিতে গিয়ে কথা বলেন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তবে পড়ে যান দালালদের খপ্পরে। যারা রোগী ও তাদের স্বজনদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।

হাসপাতালটিতে দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের বিভিন্নভাবে হয়রানির চিত্র দেখতে পান দুদক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার। দুদকের অভিযোগ নম্বরে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে এসে তথ্যের কথা জানান, দুদকের কর্মকর্তারা।

এর আগে দুদক চট্টগ্রম-১ এর সহকারী পরিচালক ফয়সাল কাদেরের নেতৃত্বে চারজন সদস্য হাসপাতালে অভিযানে আসেন। এ সময় তারা বেশ কিছু ওয়ার্ড ঘুরে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। অভিযানের একপর্যায়ে দুদক কর্মকর্তারা প্রসূতি ওয়ার্ডে যান। এ সময় প্রসূতি ওয়ার্ডে দুই যুবক নিজেদের হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তারা কোনো ধরনের পরিচয় দেখাতে পারেননি। পরে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। তারা হলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা রাজীব বৈদ্য (২৮) ও মো. হাসান (২২)। তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রম-১ এর সহকারী পরিচালক ফয়সাল কাদের বলেন, হাসপাতালে আসা সেবাগ্রহীতা ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা গোপনে হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ সময় হাসপাতালের ৩১ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে দুই ব্যক্তি রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। দুদকের কর্মকর্তারা এমন সময়ে হাসপাতালে পরিদর্শনে আসলেন, যখন কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষে থেকে জানতে চাইলে দুদক কমকর্তা বলেন, আমরা দালালদের হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে হাসপাতালে এসেছি।

এদিকে অভিযানের একপর্যায়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের কক্ষে যান দুদকের পরিদর্শন টিম। এ সময় তারা হাসপাতালের সার্বিক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।

দুদক চট্টগ্রম-১ এর সহকারী পরিচালক ফয়সাল কাদের দালালদের দৌরত্ম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের কর্মচারী ও ওয়ার্ড বয়ের সদস্যদের নিজস্ব পোশাক রয়েছে। তবে অনেকেই নিজস্ব পোশাক পরেন না, যার কারণে রোগীরা দালাল আর কর্মচারীদের চেনেন না। হাসপাতালে কাজ করা কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে পোশাক নিশ্চিত করা সম্ভব হলে রোগী ও স্বজনদের সুবিধা হতো। একই সঙ্গে দুদকের এই কর্মকর্তা হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানান।

এ সময় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোশন করেন। তিনি জানান, চমেক হাসপাতালে যেভাবে টাকা ওড়ে, এটি অসম্ভব কিছু নয়। শুধু ওয়ার্ড থেকে নয় এই হাসপাতালে চার ধরনের দালাল রয়েছে। কেউ রোগী ভাগিয়ে নেয়া, কেউ ডায়াগনস্টিক, কেউ ওষুধের আবার কেউ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রোগীদের বিভিন্নভাবে জিম্মি করে আসছে। প্রতিদিন দালাল আটক করা হচ্ছে। তবে আবারও তারা হাসপাতালে এসে একই কাজ করছে।

পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সাংবাদিকের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, দালালদের উৎপাত কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দুদকের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা চেয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করেছি।