না.গঞ্জে শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগ সড়কের সংস্কার কাজে ধীরগতি

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ

শীতলক্ষ্যার দুই তীরের মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হলেও বেহাল সড়কের কারণে ভোগান্তি চরমে। সেতুটি উদ্বোধনের পর ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এর কানেকটিং মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কে বিরাজ করছে বেহাল দশা। সেতুটি উদ্বোধনের আগেই ওই সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি চওড়া করার কথা থাকলেও ধীরগতিতে চলছে সংস্কার কাজ। এতে করে সেতুটি চালু হলেও এই সড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর তথা নারায়ণগঞ্জবাসী।

জানা গেছে, ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পায় নারায়ণগঞ্জ শহরতলীর সৈয়দপুর ও বন্দরের মদনগঞ্জ পয়েন্টে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সেতুটির নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৫ স্প্যানবিশিষ্ট ১ হাজার ২৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণের পর ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করেন। সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতু’ হিসেবে।

এদিকে শীতলক্ষ্যার ওপর ছয়লেনের সেতুর মাধ্যমে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে বন্দর উপজেলার। তাছাড়া নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর সঙ্গে বাইপাসের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক। বন্দরে রয়েছে সিমেন্ট, বিদ্যুৎ, তুলা, ডকইয়ার্ড, খাদ্য, পানীয়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। প্রায় ৫ লাখ মানুষ ও এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যবাহী গাড়িকে চলাচল করতে হয় বন্দরের এই প্রধান সড়ক দিয়ে। অথচ দীর্ঘদিনেও সংস্কারের হাত পড়েনি সড়কটিতে। ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির বেশিরভাগই গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। ফলে দুর্ভোগ আর ঝুঁকির মধ্যেই চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন, সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকদের।

সরেজমিন দেখা গেছে, বন্দরের এক সময়ের রেললাইনটিই মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক হিসেবে গড়ে উঠেছে। সড়কে ভারী ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের অনেক স্থানে কার্পেটিং উঠে উঁচু-নিচু টিউমারের মতো সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা এ অবস্থাকে ‘সড়কের টিউমার’ বলেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে সড়কের পাড়। সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ দোকানপাট। সড়কের বিভিন্ন মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে প্রায়শই সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। নয়াপাড়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সড়কের সৃষ্টি হওয়া গর্তে ও টিউমারে ধাক্কা লেগে প্রায়শই বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সড়কের এসব মরণফাঁদে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সড়কের টিউমারের সঙ্গে ধাক্কা ও গর্তে পড়ে যানবাহনে প্রচুর ঝাঁকুনি হয়। এতে ভেঙে যাচ্ছে যানবাহনগুলোর মূল্যবান যন্ত্রাংশ। পাশাপাশি যাত্রীদের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে বন্দরের প্রায় ৫ লাখ মানুষকে।

সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর এই সড়ক দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গাড়িগুলো বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামে যাতায়াত করছে। দিনে দিনে এই সড়কটিতে যানবাহনের চাপ আরো বাড়ছে। সেতুটি উদ্বোধনের পরপরই সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হলেও চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এরই মধ্যে ভেকু দিয়ে সড়কের দুই পাশের মাটি কেটে সেখানে সুরকি ফেলে সড়ক সম্প্রসারণ করার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকায় একটি জরাজীর্ণ সেতু ভাঙ্গার কাজ চলছে। কিন্তু সড়কটিতে সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এই সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রীদের।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সাহেনা ফেরদৌস বলেন, এই সড়কটিতে বর্তমানে মেরামত খাত থেকে সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। এটা পরবর্তীতে আউটার সার্কুলার প্রকল্পের অংশ হিসেবে নতুন একটি প্রকল্প পাস হবে। সেটা ৬ লেন হবে। কিন্তু এতে সময় লাগবে। বর্তমানে আমরা মেরামত খাত থেকে ওয়াইডেনিং করছি যাতে রিসেন্ট ধাক্কাটা আমরা সামলাতে পারি। তিনি আরো বলেন, রেলওয়ের জমির নির্মিত ১৮ ফুটের সড়কটির বেশ কিছু পার্টে খারাপ অবস্থা ছিল। এখন আমরা ১৮ ফুট সড়কটি ২৪ ফুট সড়কে পরিণত করছি। এটা হচ্ছে ২ লেন। এই প্রকল্পে যেসব স্থানে বেশি ড্যামেজ রয়েছে সেখানে ওয়াইডেনিংয়ের সঙ্গে স্ট্যান্ডেনিং করবো। আশা করছি সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে তখন আর সমস্যা হবে না।