পিরোজপুর ডিসি অফিস

কর্মচারীর বিরুদ্ধে ৪২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৪২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক রিয়াজুল ও জেলা জজ কোর্টের পিয়ন মো. ফোরকান হোসেনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নগদ ও চেকের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন তারা। চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন হুমকি ধামকিসহ হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান চাকরি প্রত্যাশি একটি পরিবার। এ ঘটনায় রথীন্দ্রনাথ রায় নামে এক ভুক্তভোগী গত ২৯ আগস্ট পিরোজপুর জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় অভিযোগকারী রথীন্দ্রনাথ রায় পিরোজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযুক্ত দুইজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছেন। তবে, চাকরির প্রলোভনে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও অফিস সহায়ক রিয়াজুল ইসলাম সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরএম শাখার অফিস সহায়ক রিয়াজুল ইসলাম ও পিয়ন ফোরকান ওই ভুক্তভোগীসহ চারজনকে জেলা জজ কার্যালয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

ভুক্তভোগী রথীন্দ্রনাথ অভিযোগ করে বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারী রিয়াজুল ও পিয়ন ফোরকান গত ১২ এপ্রিল আমাকে চাকরির বিজ্ঞাপন ও প্রবেশপত্র দেখিয়ে তা পাইয়ে দেবে বলে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। চাকরি শতভাগ নিশ্চিত বলে আমাকে আস্বস্ত করে তারা। তারা দুইজন ডিসি অফিসের কর্মচারী, তাই সরল বিশ্বাসে পিরোজপুরের হোটেল অবকাশের মোড়ে মিনি চাইনিজ রেস্তোরাঁ কাজী চিকেনে বসে তাদের দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা হাতে তুলে দেই।

পরে চাকরি না হওয়ায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ওই বিজ্ঞপ্তি ও প্রবেশপত্র ভুয়া ছিল। সংশ্লিষ্ট অফিসে কোনো জনবল নিয়োগ করা হবে না। বিষয়টি আমি পিরোজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক রিয়াজুল ও জেলা জজ কোর্টের পিয়ন মো. ফোরকানকে জানালে তারা উভয়ই আমার ফোনের লাইন কেটে দেয়। টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন লোক দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে হত্যা করা হবে বলেও শাসায়। আরেক ভুক্তভোগী শন্তু মণ্ডল জানান, রিয়াজ আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমার চাকরি হয়নি। আরও এক ভুক্তভোগী শিপু ঘরামি বলেন, আমরা চারজন মিলে ১০ লাখ টাকা করে দুইবার মোট ২০ লাখ টাকা ও বিভিন্ন বিকাশ একাউন্টে আরও নগদ ২২ লাখ টাকাসহ মোট ৪২ লাখ টাকা দিয়েছি। যার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, চাকরির প্রলোভনে প্রতারণার শিকার হয়ে আমি এখন নিঃস্ব।

অভিযুক্ত রিয়াজুলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন। তার ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে এমন প্রমাণের কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমার একাউন্টে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কেন তিনি ১ লাখ টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি সমঝোতা করতে চান বলেও জানান।

এ ব্যাপারে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভিনকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি অভিযুক্ত অফিস সহায়ক মো. রিয়াজুল ইসলাম বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।