নারায়ণগঞ্জে একযুগের ব্যবধানে সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে এক যুগের ব্যবধানে সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এক যুগ আগে নারায়ণগঞ্জে ২ হাজার ৪২৮ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হলেও চলতি মৌসুমে চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া চলতি মৌসুমেই সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৭৬ হেক্টর জমিতে যা মোট চাষাবাদের ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষার চাষাবাদ ও ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিদের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার। কৃষকরা এখন ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লাভের মুখ দেখায় কৃষকরা সরিষা চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ, প্রশিক্ষণ এবং চাষিদের মাঝে প্রণোদনা, সার ও উন্নতমানের সরিষা বীজ সরবরাহ করতে পারায় সরিষার চাষাবাদ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪২৮ হেক্টর জমিতে। মোট উৎপাদন হয়েছিল ২ হাজার ৬৯৬ টন। ২০১০-১১ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজলায় ৪৫ হেক্টর, বন্দর উপজেলায় ৭০০ হেক্টর, সোনারগাঁ উপজেলায় ১ হাজার ১২৭ হেক্টর, আড়াইহাজার উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর, রূপগঞ্জ উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছিল। সে সময় প্রতি হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ করে ১.২ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গিয়েছিল। মিশ্র পদ্ধতিতে নারায়ণগঞ্জে ৬০০ থেকে ৮০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছিল। ২০১২-১৩ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে ২ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১৮৭ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চাষাবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে। ২০২১-২২ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। চাষাবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২৩ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমের তুলনায় চাষাবাদ বেড়েছে ৫৭৬ হেক্টর জমিতে। যা শতকরা ১৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৪০ ভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরিষা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। সরিষা চাষে সদরে ১০০ জন, বন্দরে ৫০০ জন, সোনারগাঁয়ে ১৪০০ জন, আড়াইহাজারে ২০০০ জন ও রূপগঞ্জে ৫০০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার (ডিএপি ও এমওপি) সরবরাহ করা হয়েছে। সরিষা চাষে বিঘাপ্রতি বীজ ১ কেজি, ডিএপি ১০ কেজি ও এমওপি ১০ কেজি প্রদান করা হয়েছে। আর্থিক সহায়তা হিসেবে সরিষা চাষে বিঘাপ্রতি বীজে ১৩০ টাকা, ডিএপি বাবদ ১৪০ টাকা ও এমওপি বাবদ ১৩০ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) লিটন দেবনাথ জানান, গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ বেড়েছে ৫৭৬ হেক্টর জমিতে। যা শতকরা ১৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ভোজ্যতেলের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। আর এই আমদানিনির্ভরতা কমাতে বর্তমান সরকার তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদে গুরুত্ব আরোপ করেছে। পূর্বে নারায়ণগঞ্জে টরি ৭, বারি ৯, সম্পদ জাতের সরিষা বীজ ব্যবহৃত হতো। এসব জাত থেকে হেক্টরপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ কেজি ফলন পাওয়া যেত। এসব জাতের চাষাবাদে সময়ও বেশি লাগত। বর্তমানে বারি সরিষা ১৪, বারি সরিষা ১৭ ও বারি সরিষা ১৮ জাত ব্যবহার করে বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া চাষাবাদের সময়ও অনেক কম লাগছে। সরকার কৃষকদের প্রণোদনাসহ উন্নতমানের বীজ ও সার প্রদান করছে। এছাড়া পূর্বে আমন চাষাবাদের পরে বোরো চাষাবাদের পূর্বে মধ্যবর্তী সময়ে কৃষকরা কোনো চাষাবাদ করতে পারত না। কিন্তু বর্তমানে তারা এই সময়টাতেও সরিষা চাষাবাদ করতে পারছে। এটাও সরিষা চাষাবাদ বৃদ্ধির অন্যতম একটা কারণ। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় সরিষার চাষাবাদ বেড়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনেক ভালো ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল। পোকামাকড়ের আক্রমণও অনেক কম ছিল। আশা করছি, এবছর সরিষার ফলনও অনেক ভালো হবে।