বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শেখ রাসেল নবজাতক বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্রে (স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট বা স্ক্যানু) বর্তমানে একটি বেডের অনুকূলে সাতজন নবজাতক ভর্তি রয়েছে। কখনো কখনো এর থেকেও বেশি রোগী ভর্তি হয়। যে কারণে স্ক্যানুর মতো স্পর্শকাতর ওয়ার্ডে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান চিকিৎসক-নার্সরা। গত বুধবার হাসপাতালটির স্ক্যানু ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। অভিভাবকরা বলছেন, শুধু শয্যা সংকটই নয় সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা পায় না শিশুরা। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শেখ রাসেল নবজাতক বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, নবজাতকদের বিশেষ সেবার জন্য সরকার অনুমোদিত শয্যা সংখা রয়েছে মাত্র ১৫টি। অথচ গত ২৪ ঘণ্টায় (গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছে ৩০ জন। এছাড়া আগে চিকিৎসাধীন ছিল ৭৭ জন। যা নিয়ে মোট চিকিৎসাধীন রয়েছে ১০৭ জন। অর্থাৎ বর্তমানে একটি শয্যার অনুকূলে সাতজন নবজাতক চিকিৎসাধীন।
স্ক্যানু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত এক সেবিকা বলেন, শুধু আজই নয়, প্রতিদিন এভাবে অতিরিক্ত রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। অসুস্থ নবজাতকদের জন্য বিশেষ প্রযুক্তিতে শয্যা তৈরি করা হয়। নিয়ম অনুসারে একটি শয্যায় একজন নবজাতক থাকার কথা। কিন্তু ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ভর্তি রোগী থাকায় এক বেডে ২/৩ জন করেও রাখা হয়েছে। এই সেবিকা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের যথেষ্ট ভোগান্তির মুখে থাকতে হয়। প্রতিদিনই এসব শিশুর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। আরেক সেবিকা বলেন, স্ক্যানুতে নবজাতকের বেড, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি বরাদ্দ না দিলে আমরা যারা কাজ করি তারাই তো সঠিকভাব কাজ করতে পারি না। সেবা নিতে যারা আসেন তারা সন্তুষ্ট হবেন কি করে? তিনি বলেন, এখানকার ডাক্তার, নার্স সবাই ভালো চিকিৎসা দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু চিকিৎসা দেয়ার আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করেই যেমন পারি তেমন সেবা দিতে হয়।
স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট বা স্ক্যানু নবজাতকদের আইসিইউ হিসেবে কাজ করে। ইউনিসেফ এবং কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা কোইকার সহায়তায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নবজাতকের এই সেবাকেন্দ্র চালু হয়। এতে সদ্যজাত নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা থাকে।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা, ঢাকা বিভাগের মাদারীপুর, শরিয়তপুর জেলার অসুস্থ নবজাতকও শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ রাসেল স্ক্যানুতে ভর্তি করা হয়। ফলে সারা বছরই রোগীর চাপ থাকে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, স্ক্যানু বাস্তবায়ন হয়েছে ইউনিসেফের অর্থায়নে। ওখানে নবজাতক রোগীর ধারণক্ষমতার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু চাইলেই ওয়ার্ড বাড়ানো সম্ভব নয়। পরিচালক বলেন, চাইলেই আমি বড় কক্ষ দিতে পারি। কিন্তু স্ক্যানুর পরিসর বৃদ্ধিতে চিকিৎসার সরঞ্জাম, শয্যার ব্যবস্থা করে ইউনিসেফ। এজন্য স্ক্যানু ওয়ার্ডটি বর্ধিত করা নির্ভর করে ইউনিসেফের ওপর। ইউনিসেফ বরিশাল বিভাগের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা এএইচ তৌফিক আহমেদ বলেন, বরিশালে যখন ছিলাম তখন স্ক্যানুটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। ওইসময়ে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ৪ হাজার স্কয়ার ফুটের কক্ষ চাহিদা করেছিলাম। কিন্তু ১৬০০ স্কয়ার ফুটের ব্যবস্থা হয়েছিল। যে কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম স্থানে স্ক্যানুটি বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। তবে আমিও মনে করি শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ক্যানুটি বড় করা উচিত। ইউনিসেফ বরিশালের বিভাগীয় প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, স্ক্যানু সম্পর্কে আমি আমার সহকর্মীর কাছ থেকে জেনেছি। কিন্তু আরও ভালোভাবে জেনে এবং প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এরপরে বক্তব্য দিতে পারব।