ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আহত সাত

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

কথা কাটাকাটি থেকে মারধরের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক তিনটি উপগ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনের পাশে মারামারির সূত্রপাত হয়।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিএফসির অনুসারী ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মো. শাকিলকে মারধর করে সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা। এ সময় মারধরের খবর পেয়ে তার বন্ধু আরবি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মমিনুর রহমান আসিফ ঘটনাস্থলে গেলে সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা আসিফকেও মারধর করে। এ ঘটনার জেরে রাত ১২টার দিকে বিজয় ও সিএফসির অনুসারীরা একসঙ্গে সিক্সটি নাইন গ্রুপের মুখোমুখি হয়। পরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। এ সময় বিজয়ের অনুসারীরা সোহরাওয়ার্দী হল মোড়ে অবস্থান নেয়। এছাড়া সিএফসির অনুসারীরা আমানত হলের সামনে এবং সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

সংঘর্ষ চলাকালে বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হয়। ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের। ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঘটনাস্থল। এ ঘটনায় আহত দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বিবদমান গ্রুপগুলো হলো সিক্সটি নাইন, সিএফসি ও বিজয়। এদের মধ্যে সিক্সটি নাইন গ্রুপ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। অন্যদিকে সিএফসি ও বিজয় গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনের একটি চায়ের দোকানে বসে ধূমপান করছিল সিক্সটি নাইন গ্রুপের এক কর্মী। পাশের একটি টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিল বিজয় ও সিএফসি গ্রুপের কয়েক কর্মী। এ সময় সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী ধোঁয়া ছাড়লে সিএফসির এক কর্মী প্রতিবাদ করে। সে তার শিক্ষাবর্ষ জানতে চায়। পরে সিক্সটি নাইনের ওই কর্মী নিজেকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে সিএফসির কর্মী তার ওপর চড়াও হয়। জুনিয়র হয়ে কেন এভাবে প্রকাশ্যে ধূমপান করছে এসব নিয়ে তর্কাতর্কিতে জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিক্সটি নাইন গ্রুপের সঙ্গে সিএফসি ও বিজয় যৌথভাবে সংঘর্ষ শুরু করে। এ সময় সিক্সটি নাইনের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে ও ভেতরে, সিএফসি কর্মীরা শাহ আমানতের ভেতরে এবং বিজয়ের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী মোড়ে অবস্থান নেয়।

তিন গ্রুপের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায় গ্রুপগুলোর নেতাকর্মীদের। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি রাত পৌনে ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে রাত সাড়ে ৪টার দিকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় তিন পক্ষ। সোয়া ৫টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, রাতে আমাদের এখানে সাতজন চিকিৎসা নিতে এসেছিল। তাদের শরীরে ইট-পাথরের আঘাত ছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, জুনিয়রদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সিএফসি গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদাফ খান বলেন, রাত ১০টার দিকে স্টেশন তলায় (চায়ের দোকান) আমাদের এক কর্মীকে সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মীরা মারধর করে। পরবর্তী সময় সিক্সটি নাইনের কর্মীরা বিজয় গ্রুপের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায়। আমরা আমাদের ছেলেদের হলে ঢুকিয়ে দিই। কিন্তু ভোররাতে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা আমাদের কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।