ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেড় বছর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বন্ধ

শীতলক্ষ্যার ওয়াকওয়ে সীমানা পিলার স্থাপন কাজে বাধা

শীতলক্ষ্যার ওয়াকওয়ে সীমানা পিলার স্থাপন কাজে বাধা

প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের প্রাণ শীতলক্ষ্যার তীরে চলমান ওয়াকওয়ে ও সীমানা নির্ধারণী পিলার স্থাপন প্রকল্পের কাজে বাধা প্রদানের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালীদের বাধার কারণে ব্যাহত হচ্ছে সীমানা পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ।

দীর্ঘদিন ধরে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকা ও ভেকু সংকটসহ নানা কারণে গত দেড় বছর ধরে শীতলক্ষ্যার তীরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বন্ধ থাকায় অবৈধ দখলদাররা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে শীতলক্ষ্যার বেশ কিছু স্থানে সীমানা নির্ধারণী পিলার স্থাপনে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে নদীরক্ষায় শীতলক্ষ্যার সীমানা পিলার স্থাপন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট রিট পিটিশন নং ৩৫০৩/২০০৯ এর নির্দেশনা অনুযায়ী শীতলক্ষ্যা নদীসহ রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী চারটি নদীরক্ষায় জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশ দেয়। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যৌথ উদ্যোগে শীতলক্ষ্যা নদীর কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এবং বেশ কিছু স্থানে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে।

২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর পরই জোরেশোরে শুরু হয় বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযান। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীতে ২ হাজার ৪৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

এদিকে, হাইকোর্টের নির্দেশে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) পদ্ধতিতে সিএস জরিপ মোতাবেক সীমানা পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটির মোট ব্যায় ১ হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। প্রকল্পটির নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় ১৭ কিলোমিটারের নির্মাণব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫০ কোটি টাকা। শীতলক্ষ্যার নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর এলাকা থেকে রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ পিলার স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে যার সহস্রাধিক সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে প্রিমিয়ার সিমেন্ট থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার, সুলতানা কামাল ব্রিজ এলাকায় ৩ কিলোমিটার এবং শীতলক্ষ্যার পূর্ব তীরে বন্দরে ডিআইপিটিসি থেকে আকিজ সিমেন্ট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ওয়াকওয়ে নির্মিত হবে।

এরই মধ্যে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ নারায়ণগঞ্জেও চলমান রয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে শীতলক্ষ্যায় সীমানা পিলার স্থাপন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজে বাধা দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিএস জরিপ অনুযায়ী অসংখ্য সীমানা পিলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে স্থাপন করতে হচ্ছে, যা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতার। এছাড়া, বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা ডকইয়ার্ড ও বসতবাড়ির মালিকরাও একজোট হয়ে বাধার সৃষ্টি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় বছর ধরে শীতলক্ষ্যায় বন্ধ রয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। দীর্ঘদিন ধরে বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না। এছাড়া, উচ্ছেদের অন্যতম হাতিয়ার ভেকুর সংকটও ছিল। যে কারণে বেশ কিছু স্থানে অবৈধ দখলদাররা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক স্থানে নদীর তীর ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রকল্পের পরিচালক শাহনেওয়াজ কবির জানান, শীতলক্ষ্যা তীরে ওয়াকওয়ে এবং সীমানা নির্ধারণী পিলার নির্মাণ প্রকল্পের কাজে বেশ কিছু স্থানে বাধা প্রদানের কারণে নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু ডকইয়ার্ড ও বসতবাড়ির কারণে ওয়াকওয়ে ও সীমানা নির্ধারণী পিলার স্থাপন করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না। একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছিল না। আমরা বাধা দেয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত