ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধূমপানমুক্ত হোটেল-রেস্তোরাঁ চান খুলনার রেস্তোরাঁ মালিকরা

ধূমপানমুক্ত হোটেল-রেস্তোরাঁ চান খুলনার রেস্তোরাঁ মালিকরা

হোটেল-রেস্তোরাঁয় শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের জন্য সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা বিভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা। গত সোমবার খুলনার ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহযোগিতায় ও অ্যাডভান্সমেন্ট অব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট (আহার) বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে তারা আরও জানান, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় স্মোকিং জোন রাখার বিধান বাতিল করতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস করতে হবে।

তারা বলেন, রেস্তোরাঁয় একটি জায়গা ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও সেখান থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় পরোক্ষ ধূমপানের কবলে পড়ছেন অধূমপায়ীরা। কোনোভাবে ধূমপানের প্রভাব থেকে তাদের মুক্ত করা যাচ্ছে না। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান বক্তারা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম মুনিম লিংকন জানান, রেস্তোরাঁতে স্মোকিং জোনের সুযোগ নিয়ে তরুণরা ধূমপানমুখী হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্মোকিং জোন বাতিলের আইন করা জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি খুলনা মহানগর কমিটির সেক্রেটারি শ্যামল কুমার ঘোষ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ধূমপানের কারণে ক্যান্সারের ব্যাপকতা বাড়ছে। পরোক্ষ ধূমপানেও একই স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে রেস্তোরাঁতে স্মোকিং বাতিল করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও যশোর জেলা সেক্রেটারি আলহাজ শেখ মুকুল হোসেন বলেন, সব হোটেল-রেস্তোরাঁকে শতভাগ ধূমপানের আওতায় আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস হওয়া দরকার। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির বাগেরহাট জেলা কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রেস্তোরাঁ মালিকদের কেউ চান না রেস্তোরাঁর অভ্যন্তরে ধূমপান চলুক। তাই হোটেল-রেস্তোরাঁতে স্মোকিং জোন বন্ধে অচিরেই আইন করা হোক। মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্মোকিং জোন বাতিলের পক্ষে মত দেন মাগুরা জেলা কমিটির সভাপতি আলহাজ নিয়ামত আলী, ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সেক্রেটারি নিতাই চন্দ্র, নড়াইল কমিটির সভাপতি আব্দুর রব মোল্লা, সাতক্ষীরা জেলার সভাপতি শাহ আলম প্রমুখ।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আহার বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এম. রেজাউল করিম সরকার রবিন বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব হসপিটালিটি সেক্টরকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হলে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা ডিএসএ বা স্মোকিং জোন বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও এটিএন বাংলার প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান বলেন, স্মোকিং জোন বাতিলের প্রস্তাব ভালো ও ধূমপানমুক্ত পরিবেশের জন্য সহায়ক। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির বলেন, শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণে রেস্তোরাঁতে কোনো ধরনের ধূমপানের ব্যবস্থা রাখা অনুচিত। তাই আইন করে এটা বাতিল করতে হবে।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া অধূমপায়ীদের নাগরিক অধিকার। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে রেস্তোরাঁকে পাবলিক প্লেস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ এর বিধান রাখা হয়েছে, যা পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে অন্তরায়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. শরিফুল ইসলাম। প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আহার, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এম. রেজাউল করিম সরকার রবিনের সভাপতিত্বে এবং ডাম প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন আক্তার রিনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৭০ জন নেতা।

সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত পাস করে রেস্তোরাঁসহ সব পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান খুলনা বিভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত