চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বাজার

সরবরাহ বাড়ায় রমজানে সংকটের সম্ভাবনা নেই

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। ইতোমধ্যে প্রায় সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। পর্যাপ্ত মজুতও রয়েছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গত কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণ এবং পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ডলার সংকটে কয়েক মাস আগে পণ্য আমদানি কিছুটা কমলেও তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। মার্চে রমজান মাস উপলক্ষ্যে যারা পণ্য আমদানিতে এলসি খুলেছেন তাদের পণ্য বাজারে আসা শুরু হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেলের দাম মণপ্রতি ৪০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬৬০ টাকা এবং সয়াবিন তেলের দাম মণপ্রতি ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৩৬০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ৬ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা, চীনা রসুন কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকা এবং চীনা আদা কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। মসুর ডালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। অস্ট্রেলিয়ান ছোলা কেজি প্রতি ৪ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা, ভারতীয় ছোলা কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। মটর ডালের দাম কেজিতে ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬১ টাকায়। এলাচের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা, লবঙ্গ কেজিতে ২৫ টাকা কমে ১ হাজার ৩৪০ টাকা, জিরা ৩০ টাকা কমে ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে সরবরাহ বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এবং সরবরাহ লাইনে রয়েছে আরও বিপুল পরিমাণ পণ্য। গুদামেও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, ইতোমধ্যে অনেক পণ্যের শিপমেন্ট হয়েছে, বন্দরে এবং বাজারেও পৌঁছেছে আমদানি করা পণ্য। ফলে বাজারে কিছু পণ্যের দাম সামান্য কমেছে। সরবরাহ ঠিক থাকলে পণ্যমূল্য আরও কমে আসবে। সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকবে। ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য যারা এলসি করতে চায় তাদের যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয় এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংককে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে পারে।

তিনি বলেন, চিটাগাং চেম্বারের পক্ষ থেকে এ মাসের প্রথম দিকে মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স এসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬৮টি মার্কেটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মার্চের প্রথম দিকে আবারও বসবো। আমাদের টার্গেট, কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে কোনো অসাধু চক্র যেন সরকারকে বিব্রত করতে না পারে বা ব্যবসায়ী সমাজের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি যেন না হয়। মাহাবুবুল আলম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বাড়ার কোনো কারণ দেখি না। এক কোটি লোক টিসিবি’র মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে ৫ কোটি মানুষের চাহিদা মিটছে। ফলে, দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ সরাসরি সরকারের পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছেন।

তিনি জানান, আমদানির মাত্র ২০ শতাংশ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবশিষ্টগুলো ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হলেও পণ্য বন্দর থেকে সরাসরি ঢাকা বা দেশের অন্য প্রান্তে চলে যায়। তেল চিনির অধিকাংশ মিল এখন ঢাকায়। চট্টগ্রামে রয়েছে শুধু এস আলম ও টিকে গ্রুপের মিল। ফলে মিল মালিক, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন সভা করা যেতে পারে। এতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হতে পারে।