ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে তিন মাস ধরে বন্ধ ট্রেন চলাচল
৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বঞ্চিত সরকার
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য গত ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল। দুই মাস আগে নারায়ণগঞ্জে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন মার্চে শুরু হতে পারে ট্রেন চলাচল। তবে এখনো শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। যে কারণে কবে নাগাদ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে সেটা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। এদিকে ৩ মাস ধরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। ওই সময় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হতে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস লাগবে। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে চাষাঢ়া রেলস্টেশন ও নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী লেভেল ক্রসিং গেট টি২ এবং টি১ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতা সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক লোক ঢাকায় আসা যাওয়া করে। এই ডাবল রেললাইন নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্যেই হচ্ছে। এ ডাবল লাইন হলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টি ট্রেন চলতে পারবে। এটা হয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ট্রেনে ঢাকায় যেতে পারবে। ঢাকা থেকে পদ্মা লিংক প্রোজেক্টের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই প্রজেক্ট জুন মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতু অতিক্রম করে চলাচলের জন্য উপযোগী করতে পারব। মূল প্রজেক্ট যশোর পর্যন্ত ২০২৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। ফরিদপুরে আমাদের যে পুরনো লাইন রয়েছে সেটার সঙ্গে যুক্ত করার জন্যই আমাদের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আমার মনে হয় এক দুই মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন খুলে দিতে পারব।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করতো। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকেই প্রতিদিন ১০ হাজার টিকিট বিক্রি হতো। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত ফতুল্লা, পাগলা, গেন্ডারিয়াসহ আরো পাঁচটি স্টেশন আছে। সব মিলিয়ে দৈনিক ২০ হাজারেও বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করত। ট্রেনে যাতায়াতকারীদের মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব আয় হতো কমপেক্ষ ৩ লাখ টাকার মতো। ৯০ দিনে রাজস্ব আয় হওয়ার কথা ছিল কমপক্ষে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, গত ৩ মাসে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির ভাষ্য মতে প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনে যাতায়াত করতেন। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ট্রেনকে বেছে নিতেন যাত্রীরা। যাত্রী অধিকার ফোরামের তথ্য মতে সরকার গত ৩ মাসে এই খাতে ৫ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান জানান, তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজের মধ্যে একটি রেললাইনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এ বিষয়ে হেড অফিস থেকে নির্দিষ্ট কোনো সময় বলা হয়নি।