নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে বিস্ফোরণে নিহত এক, আহত ৯

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

দেশের অন্যতম পাইকারি মোকাম নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু ও আরো ৯ জন আহত হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আহতদের ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও বাকি তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় নিতাইগঞ্জ ডালপট্টিতে আরকে দাস রোডে নারায়ণগঞ্জ জেলা আটা ময়দা মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস দেওয়ানের মালিকানাধীন ভবনে এ ঘটনা ঘটে। দোতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ঘোষণা দিয়ে এটি ভেঙে ফেলার জন্য ভবন মালিককে একাধিকবার নোটিশ দেয়া হলেও ভবন মালিক কোনোরূপ কর্ণপাত করেননি।

নিহত আওলাদ হোসেন (৬৫) নিতাইগঞ্জের খাজাবাবা ট্রেডার্সের শ্রমিক ও বন্দরের মদনগঞ্জের মকসুদ আলীর ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন দিনেশ চন্দ্রের ছেলে জগদীশ চন্দ্র, আলী মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন, গোপাল চন্দ্রের ছেলে রবীন্দ্র দত্ত, মো. আসলামের ছেলে রেজাউল, মফিজউদ্দিনের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর, এলাহী বক্সের ছেলে মো. সেন্টু, মো. আলীর ছেলে মো. রাজন, আনসার আলীর ছেলে মো. মামুন, ফয়সালের ছেলে রেজাউল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টায় দোতলা ভবনের গোবিন্দ ভান্ডার ও রাজলক্ষ্মী ভান্ডার নামে পাইকারি দোকানে হঠাৎ বিস্ফোরণে আগুন লেগে যায় এবং গোবিন্দ ভান্ডারের পেছনের অংশ ও ভবনের সামনের দোতলার বারান্দার রেলিং ধসে পড়ে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। মারা গেছেন একজন।

গোবিন্দ ভান্ডারের ম্যানেজার লিটন সাহা জানান, ২০১৯ সালে এই ভবনটিতে শ্রী মা ভান্ডারে বিস্ফোরণ হয়েছিল। সে সময় বিস্ফোরণে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জগদীশ সাহা মারা যান। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে গোবিন্দ ভান্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে তখন তিনি (ম্যানেজার লিটন সাহা) গুরুতর আহত হন। গত শনিবার বিস্ফোরণের সময়েও তিনি প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই ছিলেন। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় তিনি বেঁচে গেছেন। ভবনটির ভেতরে গ্যাসের লাইন গেছে। সেই গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমা হতো। এছাড়াও সেপটিক ট্যাংকের গ্যাসও জমা হতো। গ্যাসের থেকে কয়েকবার বিস্ফোরণের কারণে তারা এক্সজস্ট ফ্যান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও দুর্ঘটনা থেকে রেহাই মেলেনি।

নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বীর মুুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির ও সাধারণ সম্পাদক শংকর কুমার সাহা বলেন, এই ভবনটিতে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনবার দুর্ঘটনা ঘটল। এর আগেও প্রাণহানি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে দ্রুত সুরাহা হওয়া দরকার।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাফি জানান, সকাল ৯টার দিকে নিতাইগঞ্জে একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেই বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের পেছনের একাংশ ধ্বসে পড়েছে। ওই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরো ৯ জন আহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুউদ্দিন বলেন, ভবনের ভেতরে গ্যাসের পাইপ আছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্তের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, কয়েক বছর আগে এ ভবনে আগুন লেগে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। গদিঘরগুলোতে বাতাস চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ভেতরে গ্যাস জমে থাকে। তিনি আরো জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের সমন্বয়ে একটি কমিটি কয়েক বছর পূর্বে শহরে অর্ধশতাধিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ঘোষণা করে এগুলোকে পরিত্যক্ত হিসেবে ভেঙে ফেলতে মালিকপক্ষকে নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু তারা এসব বিষয়ে কোনরূপ কর্ণপাত করে না। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌস জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। এতে ভবনের পেছনের একাংশ ধ্বসে পড়েছে। এটা দ্রুতই ভেঙে ফেলতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিবেন।