সিলেটে দামের উত্তাপ কমেনি ব্রয়লার মুরগির

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সিলেট ব্যুরো

চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বৈঠকের পর সিলেটের ব্রয়লার মার্কেটের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। রমজানের প্রথম দিন শুক্রবার সিলেটে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫৫ টাকা দরে।

নগরীর রিকাবীবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ ও মদীনা মার্কেটসহ অন্যান্য পাইকারি ও খুচরা মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি ক্ষেত্রভেদে ২৪০ টাকা থেকে ২৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার লাল মুরগি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬৩০-৬৫০ টাকা দরে। দেশি মোরগের কেজি বিক্রি হচ্ছে-৬০০ টাকা। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে-৪৫-৪৮ টাকা দরে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে।

গত বৃহস্পতিবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামানের সঙ্গে চার ফার্ম মালিকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভোক্তা মহাপরিচালক কাজী ফার্ম, সিপি, প্যারাগন ও আফতাব ফার্মের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে জানানো হয়, ফার্ম থেকে আগে ২২০-২৩০ টাকা করে বিক্রি করলেও রোজার মাসে তারা ১৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে ফার্ম থেকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করবেন। কিন্তু সিলেটের বাজারে এর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।

সিলেট নগরীর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র বন্দরবাজারের লায়েক পোল্ট্রিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। দোকানে কর্মরত এক যুবককে ভোক্তা অধিকারের কোন নির্দেশনা আছে কি না- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

বন্দরবাজারের ইত্যাদি পোল্ট্রি ফিডে ২৪০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রির মূল্য তালিকা সাঁটানো হয়েছে। ওই দোকানে লাল মোরগের প্রতি পিসের মূল্য ৬৩০-৬৫০ টাকা লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে দোকান মালিক জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তারা মূল্য তালিকা সাঁটিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে তারা গতকাল শুক্রবার ১০ টাকা কম মূল্যে ব্রয়লার মোরগ বিক্রি করছেন বলে জানান।

শাহী ঈদগাহ এলাকার তামিম পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী টিপু মিয়া জানান, প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পোল্ট্রি মুরগির দাম বেশি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কম মূল্যে কিনতে পারলে বিক্রিও করেন কমমূল্যে।

বন্দরবাজারে মুরগি কিনতে আসা পূর্ব জিন্দাবাজারের বাসিন্দা আলিম উদ্দিন জানান, গরু বা খাসির মাংসের দামের কারণে তা খাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে ব্রয়লার মুরগিই ছিল একমাত্র ভরসা। বর্তমানে যে হারে দাম বাড়ছে, তাতে রমজানে হয়তো বা মুরগি খাওয়া আর হবে না।

নগরের মদীনা মার্কেটে মুরগি কিনতে আসা বাগবাড়ির বাসিন্দা ফারুক রহমান বলেন, গত সপ্তাহে ছিল এক দাম। এখন দেখছি অন্য দাম। ৩ থেকে ৪ মাস আগে ব্রয়লার কিনতাম কেজি ১৫০ টাকা দরে। এর মধ্যে কী হলো যে দাম শুধু হু হু করে বাড়ছে। এভাবে আমাদের জীবন চালানো সম্ভব না। কোনোভাবেই হিসাবের মধ্যে সংসার চালানো যাচ্ছে না। মাছ-গোশত খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিতে হয়েছে।

সিলেট পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী এইচআর চৌধুরী রিয়াদ জানান, সিলেটসহ সারা দেশে পোল্ট্রি ব্যবসায় জড়িত আছেন দেড় কোটি ব্যবসায়ী। এর মাঝে সারাদেশে ৮ থেকে ১০টি করপোরেট খামার প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তিনি বলেন, করপোরেট ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে দামের তারতম্য রয়েছে। বাচ্চা উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে মুরগি পৌঁছাতে ৫ থেকে ৬টি ধাপ পার হয়। করপোরেট খামার পর্যায়ে একধরনের অবস্থা বিরাজ করছে। আর প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে অন্যরকম পরিস্থিতি। তিনি বলেন, সিলেট জেলায় চাহিদার বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ বাচ্চা উৎপাদিত হয়। তিনি বলেন, মূলত দাম বেড়েছে খামারি পর্যায়ে। বাচ্চা উৎপাদনের খরচ, খাবার, ওষুধ ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে বলে তার মন্তব্য।

এদিকে, রমজান উপলক্ষ্যে সিলেটে গত বৃহস্পতিবার থেকে বাজার মনিটরিং শুরু করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাজারে এ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি মাংসের ও মুদি দোকানকে জরিমানা করা হয়। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।